আবরার হত্যাকাণ্ড: জাতিসংঘ, ব্রিটেন ও জার্মানির প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘ, ব্রিটেন ও জার্মানি আজ পৃথক পৃথক বিবৃতি প্রকাশ করে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
আজ (বুধবার) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো আবরার হত্যা সম্পর্কে বলেন, এটি একটি দুঃস্বপ্ন। কোনো অভিভাবক চান না, তার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এভাবে মারা যাক।
মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতার যে প্যাটার্ন রয়েছে, সেটি বন্ধ করার জন্য আমরা আহ্বান জানাই। কারণ, এটি উদ্বেগজনক। বাবা-মায়েরা যেন নিশ্চিত থাকতে পারেন ক্যাম্পাসে তাদের সন্তানরা নিরাপদে আছে। মানুষেরা যেন সব জায়গায় নিরাপদে থাকে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জনগণের মনে ক্ষোভ আছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দেখেছি। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকতে হবে যাতে করে এমন ঘটনা আর না ঘটে।’ তিনি মনে করেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যেন এ বিষয়টি তদন্ত করে। এবং এ বিষয়ে তাদের সক্ষমতা কতটুকু, সেটা তারা প্রদর্শন করতে পারে।’
এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়েছে বলেও জানান মিয়া সেপ্পো।
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দফতর থেকে বুধবার দুপুরে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবাধ মতপ্রকাশের অভিযোগে বুয়েটের এক তরুণ শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ নিন্দা জানাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অভিযুক্তদের বিচার না করায় বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সহিংসতায় অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। জাতিসংঘের বাংলাদেশ দফতর লক্ষ্য করছে, অভিযুক্তদের ধরার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ফলে স্বাধীন তদন্তকারীরা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ বিচারের পথে যাবেন, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সহায়ক হবে।
এ হত্যাকাণ্ডে বিস্মিত ও মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ব্রিটেন। আজ (বুধবার) ঢাকাস্থ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বুয়েটে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। ব্রিটেন বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রসঙ্গে নিঃশর্তভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’
এদিকে, আবরার ফাহাদ হত্যায় শোক জানিয়েছে জার্মানি। পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও মনে করেছে দেশটি। ঢাকায় অবস্থিত দেশটির দূতাবাস নিজেদের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
জার্মান দূতাবাস মনে করে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ, যা বাকস্বাধীনতার স্বতন্ত্র অধিকার দেয়ার পাশাপাশি তা জনসম্মুখে প্রকাশেরও অধিকার দেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জার্মান সরকার নিজ দেশে যেমন এই অধিকারগুলো সমর্থন করে তেমনি সারা পৃথিবীতেও এর বাস্তবায়নে জোর সমর্থন দেয়। আর আমরা বিশ্বাস করি, এ অধিকারগুলোর লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বুয়েট ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় জার্মান দূতাবাস মর্মাহত উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আবরারের পরিবার ও তার সহপাঠী-বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে দূতাবাস।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে সোমবার রাতে একটি অবাসিক কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া ১৩ জনকে আটক করে পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
ওদিকে আজ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে আবরার ফাহাদ স্মরণে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে বাবা বরকত উল্লাহ তার ছেলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, সিসি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে মামলায় তাদের অনেকেই বাদ দেয়া হয়েছে। যার নেতৃত্বে টর্চার করা হয়েছে তাকেই মামলায় আসামি করা হয়নি। বাদ পড়াদের মামলায় অন্তর্ভূক্ত করার জোর দাবি জানান তিনি।
তবে সরকারের এখন পর্যন্ত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে বরকত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানেন স্বজন হারানোর ব্যথা। তিনি যদি সিসি ফুটেজ দেখেন তাহলে আমার বিশ্বাস আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা দ্রুত সময়ে গ্রেফতার হবে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে।
তদন্তকারী সংস্থার তথ্য মতে, আবরারকে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের ঘটনায় অংশ নেয় ছাত্রলীগের ২২ জন নেতা-কর্মী। আবরার যাতে শব্দ করতে না পারে বা কাঁদতেও না পারে সেজন্য তার মুখ চেপে ধরে রাখা হয়েছিল।
গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেছেন, প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ভিডিও ফুটেজে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৯