শিশু গৃহকর্মী জান্নাতীকে হত্যার স্বীকারোক্তি; মানুষ শিক্ষা নেয় না কেন?
-
গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন
বাংলাদেশের বগুড়ার অতি দরিদ্র ঘরের সন্তান ১২ বছরের শিশু জান্নাতী। নিজের ইচ্ছেয় নয়, পরিবারের বড়দের সিদ্ধান্তে কাজ করতে এসেছিল উচ্চ শিক্ষিত প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদের বাসায়। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে দরিদ্র শিশুটির শৈশব কেড়ে নেওয়া হবে তা তার বাবা-মা জানলেও বুঝতে পারে নি জীবনটাও তারা কেড়ে নেবে।
জান্নাতীর জীবন কেড়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন। তিনি শুক্রবার দুপুরে আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলীম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মামলার অপর আসামি রোকসানা পারভিনের স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদ পলাতক আছেন।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জান্নাতীকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, সে আগেই মারা গেছে। জান্নাতী স্যার সৈয়দ রোডের একটি ছয়তলা ভবনের এক তলায় কাজ করত। ওই ফ্ল্যাটটি পিরোজপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদের। বাড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী রোকসানা পারভিন, সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ও বোন । ঘটনার সময় সাঈদ আহমেদ বাসায় ছিলেন। গত রোববার থেকে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তেজগাঁও বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, রোকসানা জানিয়েছে মারধরের পর জান্নাতী অজ্ঞান হয়ে রান্নাঘরে পড়ে যায়। ওই অবস্থাতেই দুই ঘণ্টার মতো ঘরে পড়েছিল। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানায় আগেই সে মারা গেছে। এর আগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গ সূত্র জানায়, জান্নাতীর শরীরের নতুন-পুরোনো অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁরা ধারণা করছেন মৃত্যুর আগে জান্নাতী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল।
গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যেই আসছে। জান্নাতী নির্মম নির্যাতনে মারা গেছে। অনেক গৃহকর্মী নির্যাতন সহ্য করে ভয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। জান্নাতীর শরীরে আঘাতের পুরোনো চিহ্নগুলোই বলছে, তার ওপর অনেক আগে থেকেই নির্যাতন চলতো, কিন্তু তা প্রকাশ করার সুযোগ ছিল না। মৃত্যুই কেবল তার ওপর নির্মম নির্যাতনের চিত্র সবার সামনে ফাঁস করতে সক্ষম হয়েছে।
জান্নাতীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় আবারও মনে পড়লো বুয়েট ছাত্র আবরারের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা। আবরারকে হত্যার ঘটনাটি সারা দেশেই ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। আমার মনে হয় অন্তত রাজধানী ঢাকার এমন কোনো মানুষ নেই যারা এই ঘটনা সম্পর্কে জানেনি। সবাই এ কথা জেনেছে যে, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। আবরারের হত্যার বিষয়ে গোটা জাতির নিন্দা এবং হত্যাকারীদের পরিণতি গৃহকর্ত্রী রোকসানা কি দেখেননি বা শোনেননি? অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় তিনিও শুনেছেন। কিন্তু এরপরও কেন তিনি বা তার পরিবারের সদস্যরা এ ধরণের হত্যার ঘটনা ঘটালেন? আমরা কি তাহলে অতীত ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া ভুলে যাচ্ছি?
আবরার হত্যা ইস্যুতে দেশে ব্যাপক আন্দোলন ও আলোচনা হয়েছে। এটাই প্রত্যাশিত। তবে জান্নাতীকে নিয়ে সেরকম হয়তো হবে না।জান্নাতীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মধ্যদিয়ে গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হবে-এ প্রত্যাশা রইল।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।