বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, চিকিৎসা অপ্রতুল
(last modified Wed, 19 Feb 2020 13:29:24 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০ ১৯:২৯ Asia/Dhaka

প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। চলতি সপ্তাহে (১৫ ফেব্রুয়ারী) বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালন উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই আক্রান্ত হয় শতকরা ৮০ ভাগ। এখানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৫ ভাগ। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোয় এই হার শতকরা ৮০ ভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মগত কারণ ভাইরাস আক্রমণ, খাবারের সাথে বা শ্বাসের সাথে ক্ষতিকর রাসায়ানিক ও তেজষ্ক্রিয়তা (রেডিয়েশন) প্রবেশ এবং পরিবেশগত কারণে শিশুদের দেহে ক্যান্সার জন্ম নেয়।  

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণার প্রতিষ্ঠানের শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাশেদ কবির রেডিও তেহরানকে বলেন, সারা বিশ্বেই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর ৯০ ভাগ কারণই আসলে অজ্ঞাত। তবে শিল্প উন্নয়নের পথ ধরে বেশি বেশী ক্ষতিকর রাসায়নিক মানব দেহে প্রবেশের ফলে এবং দুষিত পরিবেশের কারণে  নানাবিধ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়েছে। 

শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এ ছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার অপ্রতুলতার বিষয় উল্লেখ করে  ডাক্তার রাশেদ কবির জানান, এ ক্ষেত্রে যে সুযোগ আছে তাও রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রিক।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মমতাজ বেগম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘প্রতিবছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, গরু-খাসীর কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামসহ  ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।’

চিকিৎসা সাফল্য

সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো শিশু ক্যান্সার রোগীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। গত বছরের ২৬ নভেম্বর কর্নেল শরমিন আরা ফেরদৌসির নেতৃত্বে ঢাকা সিএমএইচের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (বিএমটি) সেন্টারে এই সাফল্য অর্জিত হয়।

চিকিৎসা পাওয়া ১০ বছর বয়সী শিশু সওদা আক্তারের বাবা সেনাবাহিনীর এতজন করপোরাল। গত বছর ৩১ জানুয়ারি সিএমএইচ ঢাকার শিশু বিভাগে সওদাকে নিয়ে আসা হয়। তিন মাসের জ্বর নিয়ে সে ভর্তি হয়। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার ‘নিউরোব্লাস্টোমা স্টেজ-৪’ রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। এরপর প্রথম পর্যায়ে অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার অপসারণ, এরপর কেমোথেরাপি এবং শেষে রোগীর নিজের অস্থিমজ্জাই তার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে এই প্রথম দেশে নিউরোব্লাস্টোমা রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।