বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর, স্বস্তি আইনমন্ত্রীর
-
আবদুল মাজেদ
বাংলাদেশে স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল উদ্বোধন হওয়া এ কারাগারে এটাই কোনো আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রথম ঘটনা।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা জানিয়েছেন, শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ফাঁসি কার্যকরের পর তার লাশ তার গ্রামের বাড়ি ভোলায় দাফনের কথা থাকলেও সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের প্রবল আপত্তির মুখে ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি ভোলার প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত মাজেদের শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়।
শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে আবদুল মাজেদের দাফন করা হয়েছে।

বিরাট স্বস্তির ব্যাপার: আইনমন্ত্রী
আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, রায় কার্যকর হয়েছে। এতে অবশ্যই আমার একটু স্বস্তি আছে। এরা হচ্ছে প্রকৃত খুনি। এদের সমাজে রাখাটাই উচিত না। আমরা যে এটা কার্যকর করতে পেরেছি, নিশ্চয় এটা আমাদের জন্য এক বিরাট স্বস্তির ব্যাপার।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আমার মনে হয় জনগণের কাছে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি ছিল, সেটা রক্ষা করা হয়েছে। আমি আগেও বলেছি— যারা বাইরে আছেন, ইনশাআল্লাহ আমরা তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করব। আবদুল মাজেদের রায় কার্যকর হলো। আর যারা দেশের বাইরে আছেন, তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে একে একে রায় কার্যকর করা হবে।
এর আগে রাত ১০টা ৫২ মিনিটে কারাগারে গিয়ে পৌঁছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা। এরও আগে রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার সিভিল সার্জন পৌঁছেন কারাগারে। এরপর ১০টা ৪৭ মিনিটে পৌঁছেন জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যে ছয় আসামি পলাতক ছিলেন, ক্যাপ্টেন মাজেদ তাদেরই একজন।

গত সোমবার রাত ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে। গ্রেপ্তারের পর মাজেদ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হেমায়েত উদ্দিনকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২২-২৩ বছর ধরে তিনি কলকাতায় ছিলেন। সেখান থেকে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তিনি ঢাকাতেই ছিলেন।
গত বুধবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। ওইদিন বিকেলে মাজেদ রাষ্ট্রপতির কাছে এ আবেদন করেন। কারা কর্তৃপক্ষ আবেদনটি বিকেলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে বঙ্গভবনে পৌঁছানো হয়। প্রাণভিক্ষার আবেদনটি বঙ্গভবনে পৌঁছার পরপরই তা খারিজ করে দেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল হলে ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেয়। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি এখনো পালিয়ে আছেন। এদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় ও এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অন্য তিনজন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়া ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।