'১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আমরা কী অন্যায় করেছি?'
-
ড. এ কে আবদুল মোমেন
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাবাহী দুটি নৌকাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এসব নৌকায় অবস্থানরতদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘ কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাশেলেত শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন, সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গাকে সাহায্য করতে পদক্ষেপ নেয়া না হলে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন আজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাগরে ভাসমান দুটি নৌকায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত।
তিনি প্রশ্ন করেন, ’সবসময় আমরাই কেন তাদের দায়িত্ব নেব? এই মহাসাগরের চতুর্দিকে আরও অনেকগুলো রাষ্ট্র আছে। জাতিসংঘের আইন হচ্ছে এ ধরনের মানবিক দুর্যোগ হলে উপকূলবর্তী দেশগুলোর সমান দায়িত্ব ভুক্তভোগীদের দেখভাল করার।“
ড. মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদের নয়, মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারেরই প্রধান দায়িত্ব তাদের দেখভাল করা। নতুবা বাকি সবাই মিলে এদের দেখভাল করতে হবে। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আমরা কী অন্যায় করেছি, যে দুনিয়ার বাকি রোহিঙ্গাদেরও আশ্রয় দিতে হবে? এটা কী ন্যায়বিচার?’
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীবাহী দুটি নৌকা গভীর সমুদ্রে অবস্থান করছে। ওই দুটি নৌকায় ৫০০ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাগরে টাকা আদায়ের কৌশল
সাগর পথে রোহিঙ্গাদের এ বিপদসংকুল যাত্রা সম্পর্কে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জমিরউদ্দিন রেডিও তেহরানকে জানান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূল থেকে এ সব রোহিঙ্গারা দালালদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনচালিত বোট বা ছোট জাহাজে চেপে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিল। পথে সাগরে অবস্থানকালেই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে মাঝ দরিয়ায় তাদের আটকে রাখা হয়। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এদের নিকটজনদের নিকট থেকে টাকা বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়ায় দালালদের নির্দিষ্ট লোকের কাছে পৌঁছানোর পরই এদের মালয়েশিয়ার উপকূলে নামিয়ে দেবার কথা ছিল। তবে করোনা পরিস্থিতিতে মালয়শিয়ায় লকডাইন ও উপকূলে পুলিশের কড়াকড়ির কারণে এসব রোহিঙ্গারা সেখানে পৌঁছাতে পারে নি। এরপর তাদের নিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের উপকুলে ভিড়তে না পেরে ফের বাংলাদেশের দিকে ফিরে আসে।
মোহাম্মদ জমিরুদ্দিন জানান, এতোদিন বোটের মাঝিদের সাথে মোবাইল ফেনে যোগাযোগ করা গেলেও এখন তাদের মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেছে। ইঞ্জিনের তেল ফুরিয়ে গেছে এবং যা কিছু খাবার ছিল তাও ফুরিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সাগরে ভাসমান অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে ঝড়ো হাওয়া মোকাবেলা করে এভাবে তারা আর বেশিক্ষন বেঁচে থাকতে পারবে না।

সব দেশের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ
এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সব দেশের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সমুদ্রে নৌকায় ভাসমান রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদের ফোনে অনুরোধের প্রেক্ষিতে গতকাল (সোমবার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও মানবিকতার পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ৫০০ রোহিঙ্গা সে তুলনায় অতি সামান্য। তারা এখন বাংলাদেশ সীমানায় নেই। মানবিক কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অনুরোধ করা হলেও এ এলাকার অন্যান্য দেশকে আশ্রয় দিতে বলা হয়নি। যুক্তরাজ্যের রয়েল জাহাজ এসেও তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় দিতে পারে বলে যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রীকে ড. মোমেন বলেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উচিত বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখনও সামরিক অপারেশন চলছে এবং রোহিঙ্গারা মারা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আবারও বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। তারপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে সোচ্চার নয়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।