ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে বাংলাদেশে নিহত ১৩, কাটল মহাবিপদ সংকেত
(last modified Thu, 21 May 2020 07:40:45 GMT )
মে ২১, ২০২০ ১৩:৪০ Asia/Dhaka
  • সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী
    সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন এক নারী

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় সাত জেলায় অন্তত ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১২ জন নিহত ও আট জন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবী সৈয়দ শাহ আলম (৪৫), গলাচিপার পানপট্টির রাশেদ (৫), ভোলার চরকচ্ছারিয়ার মো. সিদ্দিক ফকির (৭০), বোরহানউদ্দিনের রফিকুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুর মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের মজিদ মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা (৫৫) ও আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ধুপতি গ্রামে মুজাহার বেপারীর স্ত্রী গোলেনুর বেগম (৭০) এবং ইন্দুরকানী উপজেলার উমিদপুর এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে শাহ আলম (৫০)।

আম্ফানের প্রভাবে প্রবল ঝড়ে যশোরের চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক নারী ও তার মেয়ে মারা গেছেন। চানপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩)। এদিকে, রাত ১১টার দিকে শার্শার টেংরা গ্রামে ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে মুক্তার আলি নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

এছাড়া, সাতক্ষীরা ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় করিমুন্নেসা নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখান বাজার এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শহীদ (৬০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। 

ঝিনাইদহে রাতে ঝড়ের মধ্যে ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। তিনি বলেন, রাত ১০টার পর ঝড়ের দাপট বাড়লে সদর উপজেলায় হলিধানী গ্রামে একটি গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে নাদিরা বেগম নামে ৫৫ বছর বয়সী ওই নারীর মৃত্যু হয়।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন বরিশালের হিজলা, পটুয়াখালীর গলাচিপা ও ভোলার চরফ্যাশনের একজন করে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় আম্পানের তাণ্ডব

‘আম্পান’এখন গভীর স্থল নিম্নচাপ

বুধবার রাতে উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এর আগেই ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই দুর্বল হতে থাকায় মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিনে বলা হয়, ঝিনাইদহ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে গভীর স্থল নিম্নচাপ আকারে সকাল ৯টায় রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্বদিক অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।

বুলেটিনে আরও জানানো হয়, সাগর উত্তাল রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৬ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহে এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।