গ্রেফতার ১০
আদাবরে হাসপাতাল কর্মীদের পিটুনিতে এএসপি’র মৃত্যু, হত্যা মামলা দায়ের
-
আনিসুল করিম
বাংলাদেশের রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
আদাবর থানার (ইন্সপেক্টর অপারেশন) মো. ফারুক মোল্লা জানিয়েছেন, আজ (মঙ্গলবার) ভোরে নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা (নং-৯) করেছেন। এই মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, "ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৮-৯ জন লোক মিলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করছেন। কেউ মাথায়, কেউ বুকে আঘাত করেছেন। কাউকে আবার এএসপি আনিসুল করিমের হাত বাঁধতে দেখা গেছে। তারা সবাই হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার, এখানে কেউ চিকিৎসক ছিলেন না। তাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটি স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড।"
তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, এএসপি আনিসকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। এই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের অভিযোগের পর পুলিশ ওই হাসপাতাল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ফুটেজে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন কর্মচারী আনিসকে মারধর করছিলেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার পর হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরই আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।

গাজীপুরে দাফন সম্পন্ন
মারধরে নিহত বরিশালের সহকারী সুপার মো. আনিসুল করিমের দাফন হয়েছে গাজীপুর সিটির কেন্দ্রীয় কবরস্থানে। আজ সকালে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে স্থানীয় ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আজাদ মিয়া, কাপাসিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খানসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১ বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারে দায়িত্বে ছিলেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।