জ্ঞানসূচকে ধুঁকছে বাংলাদেশ: শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তকদের প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী, ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম এবং তালিকায় স্থান পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে সবার শেষে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম নলেজ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে বুধবার এ বৈশ্বিক জ্ঞানসূচক প্রকাশ করে। ২০১২ সালের তুলনায় বাংলাদেশ বিভিন্ন চলকে সামান্য উন্নতি করে মোট ৩৫ দশমিক ৯ নম্বর পেলেও বৈশ্বিক গড় নম্বর ৪৬ দশমিক ৭-এর অনেক কম। ২০১২ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১২তম।
সাতটি সেক্টরের অধীনে ১৩৩টি চলক বিশ্লেষণ করে তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রধান সাতটি সেক্টর হচ্ছে প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ,উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সাধারণ সক্ষমতার পরিবেশ। দুই বছর আগে এশিয়া মহাদেশে উদ্ভাবন সূচকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে ছিল,আর শীর্ষে ছিল সিঙ্গাপুর। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স অনুযায়ী,সবচেয়ে কম উদ্ভাবনী দেশের কাতারে আছে বাংলাদেশ, কাজাখস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তান।
জ্ঞানসূচকে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করে, শিক্ষা গবেষণা সংস্থা এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ এর চেয়ারমান এবং সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন রেডিও তেহরানকে বলেছেন,বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় ৫০বছরেও আমরা জাতিকে একটি মান সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ শিক্ষাকে বানিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে;মেধার বদলে দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং দেশে কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ রেডিও তেহরানকে বলেন, উন্নয়নের আর অগ্রগতির এত ডামাডোলের মাঝে জ্ঞান অর্জনের মাপকাঠীতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রমাণ করে মেধাভিত্তিক শিক্ষা, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এবং প্রগতিবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারি নি। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।
অনুরুপ মতামত ব্যক্ত করে কক্সবাজার নিউজ - এর সম্পদাক প্রফেসর এস এম আখতার উদ্দিন চৌধুরী রেডিও তেহরানকে বলেন, একটি দেশকে উন্নত করতে হলে অবশ্যই শিক্ষাকে সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন জাতিকে। বলা হচ্ছে ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন খাতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। অনেক অত্যাবশ্যক প্রযুক্তি আমাদের আয়ত্তের বাইরে আছে।
সমাজচিন্তাবিদরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, অর্থনীতি ও মানবসম্পদের নানা সূচকে বাংলাদেশ ভালো করছে। আমাদের গড় আয় ও আয়ু দুটোই বেড়েছে। অবাকাঠামোগত অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হলে এ উন্নয়ন টেকসই হবে না।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৫
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।