করোনায় দেশে ফিরতে প্রবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ: বিদেশ ফেরতদের ঋণ ও সনদ

বিশ্ব মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ফিরে এসেছেন ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ প্রবাসী শ্রমিক। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ বিদেশে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে এসেছেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৪ পুরুষ কর্মী এবং ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী কর্মী। ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি এসেছেন কাজ হারিয়ে।

ফেরত আসা এসব কর্মীকে আর্থিকভাবে পুনরেকত্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীতে  এক সংবাদ সম্মেলনে  প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন,ফেরত আসা বিভিন্ন পেশার প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারি খরচে আরপিএল (রিকগনিশন অব প্রায়র লার্নিং) বা অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের অর্জিত দক্ষতার সনদের মাধ্যমে আবার ভালো চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন। এই সনদ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব বহন করবে। কর্মীরা তাদের পূর্ব অর্জিত দক্ষতার স্বীকৃতি পেলে গুণগত শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ  মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন, সরকার একটি মান সম্পন্ন  ও নিরাপদ অভিবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে যাতে আভিবাসী শ্রমিকের স্বার্থ ও দেশের সুনাম বজায় থাকে।   এ সময় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান,মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া শ্রমিকদের সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।  

এদিকে, বিদেশে আটকে পড়া শ্রমিকরা দেশে ফেরার জন্য  বিক্ষোভ করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। 

লেবাননে প্রবাসীদর বিক্ষোভ

লেবাননে অবস্থানরত কয়েক হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক দেশে ফিরে আসার জন্য বৈরুতের দূতাবাসে আবেদন করলেও তাদের ফেরানোর ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত কোন তথ্য দিতে পারছে না সরকার।

ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা যায়,যেসব শ্রমিকের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। এ জন্য গত কয়েক দিন ধরে বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করে আসছে ভুক্তভোগীরা।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে লেবাননে রাজনৈতিক সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এক প্রকার কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে অর্ধাহারে এবং অনাহারে থাকার কথা জানিয়ে প্রবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশে ফেরত আসতে চাইছেন।

এমন পরিস্থিতিতে লেবাননে আটকা পড়া শ্রমিকদের বিশেষ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেবার দাবি জানিয়েছেন রামরুর প্রেসিডেন্ট তাসনিম সিদ্দিকী। লেবানন সরকারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত চুক্তি করা এবং এসব শ্রমিককে বাংলাদেশ বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

এরই মধ্যে জর্ডানে নতুন করে পোশাক শ্রমিক পাঠাবার চাহিদা এসেছে। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার কর্মী নেবে জর্ডান। জর্ডানের সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা ক্ল্যাসিক ফ্যাশনের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সানাল কুমার বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর)ঢাকায়  প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ প্রস্তাব দেন।

সহজ  সুদে বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ সুবিধা

এদিকে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাস ফেরত কর্মীদের জন্য ৪ শতাংশ সরল সুদে বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এই লক্ষ্যে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিনা সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বাকি ৫০০ কোটি টাকা প্রক্রিয়াধীন আছে।

 মূলত করোনা সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের ১ মার্চের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীরা পাবেন এই ঋণ। নীতিমালা অনুযায়ী,এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সরল সুদের এই ঋণের মেয়াদ হবে খাত অনুযায়ী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে।

তবে,এই ঋণ প্রাপ্তিতে শর্ত কঠিন বলে মনে করেন প্রবাসী কর্মী এবং অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন,অনেক প্রবাসী কর্মী জানেন না তারা ঋণ নিয়ে কীভাবে কাজ শুরু করবেন বা কী কাজ করবেন। যার কারণে জটিলতা তৈরি হয় ঋণ আবেদনের ক্ষেত্রে। তাছাড়া ঋণ গ্রহণের জন্য একটি  শর্ত হচ্ছে, সম্পদ থাকতে হবে। অনেক অভিবাসী কর্মীর সেরকম কোনও সম্পদ নেই। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৯

• বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।