মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা অনিশ্চিত: মাসুদ বিন মোমেন
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে আগামীকালের (বৃহস্পতিবারের) পূর্বনির্ধারিত বৈঠকটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল (মঙ্গলবার) সাংবাদিকদের এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতার যে রদবদল হয়েছে তাতে দেশটির সঙ্গে ঢাকার কাজ করতে অসুবিধা হবে না। গত ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে অধিকাংশ সময়ে সেনা শাসিত ছিল মিয়ানমার, এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, তখনো যেভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করেছে এখনো সেভাবেই করবে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন সরকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নিজেদের স্বার্থেই মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে বাংলাদেশ।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তারা মহাপরিচালক পর্যায়ের পূর্ব নির্ধারিত যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে মতামত পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
গত মাসের মাসের ১৯ তারিখ চীনের মধ্যস্থতায় দু'দেশের মধ্যে বৈঠকে বছরের মাঝামাঝি প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত হলেও কী প্রক্রিয়ায় সেটা হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।
এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হলেও এ প্রথম সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এর সঙ্গে বাড়তি যোগ হয়েছিল এবার চীনের মধ্যস্থতা।

বাংলাদেশ একসঙ্গে এক গ্রামের সবাইকে প্রত্যাবাসন করার পক্ষে আর এর সঙ্গে একমত কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।
এ প্রসঙ্গে, রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমারে একটি নির্বাচিত সরকার থাকার পরও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দেশে ফেরানো নিয়ে কোনোরকম অগ্রগতি হয়নি। আর এখন একটা সামরিক সরকার ও জরুরি অবস্থার মধ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়টি আরও অনিরাপদ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জাতিসংঘের স্বাধীন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণহারে হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করাই ছিল ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৩