কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদ, ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ
বাংলাদেশের প্রতিবাদী লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ বিক্ষোভের পাশাপাশি এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) ১৩টি দেশের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারগণ এক যৌথ বিবৃতি আইনি হেফাজতে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ জানান। গতকাল প্রকাশিত এ বিবৃতিতে ১৩ দেশের ঢাকাস্থ মিশন প্রধানরা উল্লেখ করেছেন, গত বছর ৫ মে থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) ধারায় বিচারপূর্ব আটক মুশতাক আহমেদকে বেশ কয়েকবার জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে এবং আটকাধীন অবস্থায় তার প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
বিবৃতিতে মিশন প্রধানরা মুশতাক আহমেদের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে সরকারকে এ মৃত্যুর একটি দ্রুত, স্বচ্ছ, স্বাধীন এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার আহ্বান জানান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাসমূহ ও এর প্রয়োগে ব্যাপারে এই ১৩ দেশের সরকারের ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার দিনভর প্রতিবাদ সমাবেশ
এদিকে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে শুক্রবার দিনভর রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেছে বিভিন্ন ছাত্র, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, রাতের আধারে ভোটের বিরুদ্ধে লেখার জন্য যদি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে দিনের পর দিন আটক রাখা যায় তবে সে আইন অবশ্যই একটি কালো আইন।
বিশিষ্ট নাগরিক ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুশতাকের মৃত্যুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা এবং পরিবারকে ৫০ লক্ষ্ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি এ ঘটনায় তদন্ত করার জন্য আদালতের সুও মোটো নির্দেশনা দাবি করেছেন।

তদন্তের আশ্বাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামে নবনির্মিত পুলিশ সুপার কার্যালয়ের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, মুশতাক আহমেদ তার লেখনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কিংবা অন্যের বিশ্বাসে আঘাত হানার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গাজীপুরে তদন্ত কমিটি গঠন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের (৫৩) মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখতে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম।
২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তায় আইনে ১৩০ মামলা
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শিক্ষক, ছাত্র সাংবাদিক, বাউল শিল্পীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ২৭১ জনের বিরুদ্ধে ১৩০টি মামলা হয়েছে।
মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনের হিসেবে, করোনার বছরে বাংলাদেশে ১৯৮টি মামলা করা হয়েছে। মোট ৪৫৭ জনের বিরুদ্ধে রুজু করা মামলায় সাংবাদিক রয়েছেন ৭৫ জন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনটির অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে।

আজিমপুর কবরস্থানে মুশতাকের দাফন
এদিকে, শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় লেখক মুশতাক আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে। এ সময় তাঁর পরিবারের সদস্য ও বন্ধু–স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে লালমাটিয়ার সি ব্লকের মিনার মসজিদে তাঁর জানাজা হয়।
মুশতাক আহমেদের জানাজায় তাঁর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং স্থানীয় এলাকাবাসী অংশ নেন। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।