ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি: সরকারের ভাবনা এবং বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেছে হাইকোর্ট। আজ বুধবার (৩ মার্চ) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে, বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং তেরটি উন্নয়ন সহযোগী দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের বিবৃতির প্রেক্ষিতে আইনটি পুনঃপর্যালোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, আইনটি সংশোধন না করে বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে অপপ্রয়োগ ও হয়রানি বন্ধের উপায় খুঁজতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ আইনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী দাবি করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, “এ আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া যাবে না এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক থাকা অবস্থায় প্রতিবাদী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর অপপ্রয়োগ বন্ধে আবারও বিভিন্নমহল থেকে আইনটি সংশোধনের দাবি উঠেছে। মূলত আইনটির অজামিনযোগ্য ধারা এবং অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দশম জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। সেই সময়েও গণমাধ্যম এবং মানবাধিকারকর্মীরা আইনটির অজামিনযোগ্য ধারা, অভিযোগের পর পুলিশি তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারসহ অনেক ধারায় আইনের অপপ্রয়োগ এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানির আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন।
মানবাধিকার আইনজীবীরা বলছেন, দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবই আমলযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এ আইনে।
এ প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ- এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোরশেদ রেডিও তেহরানকে বলেন, এ আইনটির কারণে মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মার্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ আইনের অপ্রয়োগকারীদের আইনের আওতায় আন দরকার।
এই মানবাধিকার আইনজীবী অভিমত দেন যে, আইনে বাক-স্বাধিনতা খর্ব করে এমন ধারাগুলি বাতিল করা দরকার এবং এটা জামিনযোগ্য করা দরকার।
তবে, আইনটির অপপ্রয়োগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, তদন্ত ছাড়া গ্রেপ্তারের বিধান থাকায় এ আইনটির অপপ্রয়োগ হচ্ছে। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে অতি উৎসাহীদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারার জন্য সংবাদকর্মী ও সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। এজন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
আজ প্রকাশিত ঢাকার একটি দৈনিকের সাথে একান্ত আলাপকালে ইনু বলেন, বর্তমানে যে ডিজিটাল আইনটি আছে তার কতিপয় ধারায় নাগরিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ আইনটি প্রয়োগে কিছু ধারা অস্পষ্টতার কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হচ্ছে যারা ডিজিটাল আইনটা বাতিল চাচ্ছে তাদের দাবিটা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং ডিজিটাল আইনের যে ধারাগুলোর জন্য মানুষ এবং গণমাধ্যমকর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেগুলো পুনঃবিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে আইনটাকে হালনাগাদ করে ফেলা উচিত ।
ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যারা গ্রেপ্তার হয়ে আছেন তাদের দিনের পর দিন আদালত জামিন দিচ্ছে না। এই জায়গাটা আদালতের বিবেচনায় নেয়া উচিত? কারণ সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক যারা আটক আছে তারা তো দেশ থেকে পালিয়ে যাবে না। সুতরাং তাদের জামিন না দিয়ে আটকে রাখার কোনো যুক্তি নেই। যেখানে খুনের মামলার আসামি জামিন পায়, হাজার কোটি টাকার ব্যাংক চুরির মামলার আসামি জামিন পায়, যেখানে ধর্ষণকারী জামিন পায়, সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যাদের আটক করা হয়েছে তারা জামিন পায় না। আমি চাই তাদের জামিন দিয়ে বিচার করা হোক এটাই আমার পরামর্শ।
তিনি প্রস্তাব করেন, আইন, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হোক। তারা দ্রুততার সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংশোধনী গ্রহণ করবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৩
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।