বাংলাদেশে করোনায় রেকর্ড ৭৮ জনের মৃত্যু, লকডাউন চলবে, নতুন প্রণোদনার দাবী
(last modified Sun, 11 Apr 2021 11:25:44 GMT )
এপ্রিল ১১, ২০২১ ১৭:২৫ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশে করোনায় রেকর্ড ৭৮ জনের মৃত্যু, লকডাউন চলবে, নতুন প্রণোদনার দাবী

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে নয় হাজার ৭৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আরও পাঁচ হাজার ৮১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। দেশে মোট ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে চার হাজার ২১২ জন। এ নিয়ে দেশে মোট পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯০ জন করোনা থেকে সুস্থ হলো।

আজ রোববার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৮ টি ল্যাবে ২৯ হাজার ৩৭৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ২৯ হাজার ২৯৮ টি। করোনা শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৮১।

২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭৮ জন মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে পুরুষ ৫৩ জন ও নারী ২৫ জন। এ পর্যন্ত পুরুষ মৃত্যুবরণ করেছেন সাত হাজার ২৭৯ জন ও নারী দুই হাজার ৪৬০ জন। এ ছাড়া মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১০ বছরের নিচে একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন ও ষাটোর্ধ্ব ৪৮ জন রয়েছেন। 

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২০ জন, রাজশাহী বিভাগের চারজন, খুলনা বিভাগের চারজন, সিলেট বিভাগের দুইজন ও রংপুর বিভাগের একজন। 

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। ওই বছরের ১৮ জুন তিন হাজার ৮০৩ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে দিয়ে লাখ ছাড়িয়েছিল করোনার রোগী। সেদিন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ছিল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন। এ ছাড়া দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত বছরের ১৮ মার্চ।

খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ বলে দলের পক্ষ থেকে   নিশ্চিত করা হয়েছে। আজ বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ডেকে  দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদার জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি ভালো আছেন।

লকডাউন চলবে; দূরপাল্লার বাস চলবে না

এদিকে,  মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে চলমান লকডাউন আরও দুই দিন অর্থাৎ ১২ ও ১৩ এপ্রিল বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ রবিবার (১১ এপ্রিল) তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আগামী ১২ ও ১৩ এপ্রিল দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে ।

এরপর  আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সময়  দেশে জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সকল গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে।

এর আগে, করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে শপিংমল, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তারাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

এরপর বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন সেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।শুক্রবার (৯ এপ্রিল) থেকে সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল ও দোকান খোলা রাখা জন্য বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

নতুন প্রণোদনার দাবী বিজিএমইএ’র

করোনা কালে ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারী এবং রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’ তাদেরকে দেওয়া পুরনো প্রণোদনার টাকা ফেরতের জন্য সময় বাড়িয়ে দিতে এবং  নতুন করে আরও দশ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দাবী করেছে।

সংগঠনের  সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, শ্রমিকদের বেতন বোনাসের জন্য নতুন প্রণোদনার দরকার হবে। সামনে ঈদ। বেতন-বোনাস একসঙ্গে দেওয়া গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফলে পুরনো প্রণোদনার টাকা ফেরতের জন্য সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। নতুন করে আরও দশ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা লাগবে।

তিনি বলেন, এই ১০ হাজার টাকার সবই আমরা শ্রমিকদের সরাসরি দিয়ে দেবো। আর যেভাবে কারখানা চলছে, এভাবে কারখানা চালিয়ে রাখতে পারলে ব্যাংকের টাকাও একদিন পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে মালিকরা পথে বসে যাবে।

লকডাউনে শ্রমজীবিদের  জন্য  অর্থ বরাদ্দ ও রেশনিংয়ের  দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ

ওদিকে, লকডাউনে শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও রেশনিংয়ের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা চালুসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উদ্যোগে আজ রোববার সকালে নগরের ফকিরবাড়ি রোডে সংগঠনের কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে এমনিতেই শ্রমিক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষর জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। এর ধকল কাটতে না কাটতে আবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এ জন্য সরকার প্রথম ধাপে ‘লকডাউন’ দিয়েছে। এরপর আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পুনরায় ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। এতে এসব খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা আরও খাদ্য সংকটে পড়বে। কিন্তু সরকার এসব মানুষের কথা ভাবছে না। শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও অর্থসহায়তা ছাড়া কোনোভাবেই লকডাউন কার্যকর করা যাবে না। বক্তারা শের-ই-বাংলা মেডিকল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আসন ও আইসিইউ বেড বৃদ্ধি এবং নগরীতে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করার দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, লকডাউন কার্যকর করতে অবিলম্বে শ্রমজীবীদের খাদ্য ও অর্থসহায়তার ঘোষণা দিতে হবে। পাশাপাশি করোনা চিকিৎসার যে ভয়াবহ সংকট বরিশাল বিভাগে বিরাজ করছে, তা দূর করতে করোনা ইউনিটে বেডসংখ্যা এবং আইসিইউ বাড়ানোর পাশাপাশি নগরীতে এবং বিভাগের অন্যান্য জেলায় করোনার আইসোলেশন সেন্টার চালু করতে হবে।#

পার্সটুডে / এমবিএ/ আব্দুর রহমান খান/ ১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।