স্বাস্থ্যখাতকে আমরা গুরুত্ব দেইনি বলে করোনা পেয়েছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
(last modified Thu, 29 Apr 2021 12:39:35 GMT )
এপ্রিল ২৯, ২০২১ ১৮:৩৯ Asia/Dhaka

মহাকবি মাইকেল মধূসূদন দত্ত রচিত ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যের একটি সুপরিচিত উক্তি হচ্ছে- “এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে/– জানিনু কেমনে আসি লক্ষণ পশিল রক্ষঃপুরে।” নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজায় ব্যস্ত বীর মেঘনাদ যখন দেখল রামের ভ্রাতা লক্ষণ তাকে হত্যার জন্য যজ্ঞাগারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে তখন অরিন্দম (অপরাজেয় বীর মেঘনাদ) এমনি বিস্ময় বাণী উচ্চারণ করেছিল।

আজ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক তেমনি বিস্ময় উক্তি করেছেন, “আমরা স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেইনি, অবহেলা করেছি। যার ফলাফল আমরা করোনা পেয়েছি। দেখেছি করোনা মহামারিতে মানুষ কতটা অসহায়।”

আজ (বৃহস্পতিবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “করোনা আমাদের দেখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবার যদি বিপর্যয় ঘটে, তাহলে মানুষের কী অবস্থা হয়। দেশের সব উন্নয়ন থেমে যায়, দেশে শান্তি থাকে না, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়।”

জাহিদ মালেক জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্ধ জিডিপির মাত্র ০.৯%। এটাকে ৯/১০ শতাংশ করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে খুবই আন্তরিক।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ আমরা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামলে নিয়েছিলাম। বর্তমান সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ সম্পর্কে আমরা সচেতন না হলে সামনে আবার করোনার তৃতীয় ঢেউ চলে আসতে পারে। তখন অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে। এ কারণে করোনার হাত থেকে বাঁচতে চাইলে দেশের প্রতিটি মানুষকে করোনা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

তিনি জানান লকডাউন কোনও দীর্ঘমেয়াদী সমধান নয়। এতে বরং মানুষের কষ্ট বাড়ে।

টিকা সঙ্কট প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভালোভাবেই টিকা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম আমরা। মাঝ পথে ভারত টিকা বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের থেমে যেতে হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি, বিকল্প হিসেবে আমরা রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দিয়েছি। এছাড়া কেউ যদি দেশে টিকা বানাতে চায়, সে সুযোগও আমরা দিচ্ছি।

রাশেদ খান মেনন

সরকারের অপরিণামদর্শী নীতি দায়ী: মেনন

এদিকে, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সংকট তৈরি হবার জন্য সরকারের অপরিণামদর্শী নীতিকে দায়ী করেছেন ক্ষমাতাসীন রাজনৈতিক জোটের অংশীদার এবং সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

আজ (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দলীয় সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম এই নেতা বলেন, একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে গিয়ে সরকার এক ঝুড়িতে সব ডিম রেখেছিল।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘ভারতে তীব্র করোনা সংকট সৃষ্টি হয়েছে, কজেই নিজ দেশের প্রয়োজন না মিটিয়ে অন্য কাউকে ভ্যাকসিন দেবে না, সেটাই স্বাভাবিক। সরকার ভালোভাবে যাত্রা শুরু করলেও মাঝপথে তরী ডোবার উপক্রম হয়েছে। সরকার এখন চারিদিকে পথ খুঁজচ্ছে।’

সরকারের ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবিলার প্রসঙ্গ টেনে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘সরকার ও সরকারি দল ঐক্যবদ্ধভাবে সংক্রমণ মোকাবিলার কথা বললেও সেটা কথার কথা। তারা বরং হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার সূত্র খুঁজতে বেশি আগ্রহী। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে কেবল আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে করোনা মোকাবিলার নীতি দেশে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, তাতে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিপদাপন্ন। উন্নয়নের গাড়ির গতি পাওয়ার বদলে গর্তে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সমাবেশে মেনন বলেন, ‘অক্সিজেনের ক্ষেত্রেও মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান এবং ভারতের ওপর নির্ভরতা একই সংকট তৈরি করছে। বাজেট বরাদ্দ থাকলেও দুর্নীতির কারণে গত একবছরে আইসিইউ, সেন্টাল অক্সিজেন ব্যবস্থা-কিছুই করা হয়নি।

মেনন উল্লেখ করেন, এ বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছিল। এর কতটা ব্যবহার হয়েছে, আর কতটা নয় ছয় হয়েছে তা তদন্তের দাবি রাখে।’#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন