করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশে: বাড়ছে মৃত্যু ও লকডাউনের পরিধি
(last modified Fri, 04 Jun 2021 10:25:45 GMT )
জুন ০৪, ২০২১ ১৬:২৫ Asia/Dhaka
  • করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশে: বাড়ছে মৃত্যু ও লকডাউনের পরিধি

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ঘটছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের দ্বারা। পাশাপাশি দেশে অজানা একটি ভ্যারিয়েন্টও শনাক্ত হয়েছে।

সরকারের একটি গবেষণায় দেশে ভারতীয় ধরন হিসেবে পরিচিত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক সংক্রমণের (কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের) প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দেশে ৮ মে প্রথম ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর করোনাভাইরাসের ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এবং ইন্সটিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (আইডিএসএইচআই)।

দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ  ও পিরোজপুর থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা ১৬টি নমুনার মধ্যে ১৫টি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং গোপালগঞ্জ থেকে সাতটি নমুনার সবগুলোর মধ্যেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।

খুলনা থেকে সংগ্রহ করা তিনটি নমুনাই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এবং ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা চারটি নমুনার মধ্যে দুটি ছিল ডেল্টা ভেরিয়েন্ট।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত এসব  রোগীদের মধ্যে ১৪ জন দেশের সীমানার বাইরে  যাননি এবং যারা বিদেশে ভ্রমণ করেছেন তাদের সংস্পর্শেও আসেননি। সুতরাং,গবেষণায় প্রমাণ মিলছে যে,  বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে। 

গত বছরের অক্টোবরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটি প্রথম শনাক্ত করা হয়। এটি ভাইরাসের আগের স্ট্রেইনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই ভ্যারিয়েন্টটিকে ‘উদ্বেগের ভ্যারিয়েন্ট'বলে অভিহিত করে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, সমাজে  ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এরকম  সংক্রমণ কমানোর জন্য লোকজনকে কঠোরভাবে  স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে।

এদিকে,মৃত্যু বাড়ছে রাজশাহীতে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত করে  গণমাধ্যমকে বলেন, মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জন, রাজশাহীর ছয়জন এবং নওগাঁর একজন রয়েছেন। এদের  ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর বাকি ৬ জনের করোনা উপসর্গ ছিল। আইসিইউ এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তারা।

ডা. সাইফুল আরও জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে ২২৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মোট শয্যার সংখ্যা ২৩২টি।

এর আগে গত বুধবার রামেকে ৯ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে কেউ সরাসরি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, আবার কেউ ভাইরাসটি উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন।  এ নিয়ে গত ২৪ মে থেকে আজ ৪ জুন পর্যন্ত ১২ দিনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ৯৩ জন।

নাটোরে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৪ জন নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। তাদের মধ্যে নাটোর সদরে ৯ জন, বাগাতিপাড়ায় চারজন এবং সিংড়ায় একজন।  জেলা  সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন,  মোট ২৯ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করে এই ১৪ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৪৮.২৭ শতাংশ। আক্রান্তের এ হার জাতীয় গড় হারের তুলনায়  অনেক বেশি।#

এদিকে, দেশে লকডাউনের পরিধি বাড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলাসহ যেসব স্থানে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে সেসব স্থানে স্থানীয়ভাবে কঠোর লকডাউন কার্যকর করছে প্রশাসন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ২৪ মে থেকে বিশেষ লকডাউন চলছে। সাতক্ষীরা প্রশাসন শনিবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে লকডাউন আরো দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। গত সাত দিনে গোপালগঞ্জে নতুন করে ৯০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলার  মহেশপুরের বাওলী গ্রামে সাত দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী স্বরূপপুর, নেপা, কাজীরবেড়, শ্যামকুড়, বাঁশবাড়িয়া ও যাদবপুর ইউনিয়নে রাতে চলাচলে ১৫ দিনের জন্য বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ইউনিয়নগুলোয় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মানুষ চলাচল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হতে পারবে না।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/৪