রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি পদক্ষেপ চান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
(last modified Wed, 16 Jun 2021 07:00:08 GMT )
জুন ১৬, ২০২১ ১৩:০০ Asia/Dhaka
  • এ কে আব্দুল মোমেন
    এ কে আব্দুল মোমেন

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিঃ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

ভার্চ্যুয়াল আলোচনার সহ-আয়োজক ছিল জাতিসংঘে কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্কের স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা আলোচনা অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তিনি স্বাগত বক্তব্য দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বজকির উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে তাঁর সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন সৃষ্ট আবাসনসুবিধার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, এই আবাসনব্যবস্থা জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীরা যথাযথভাবে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এখানে তাদের রোহিঙ্গাবিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে সর্বদা জাগ্রত রাখতে অব্যাহতভাবে যেসব প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, তা উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পাশাপাশি এ বিষয়ে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ঘাটতির কথা তুলে ধরেন তিনি। আব্দুল মোমেন বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী তাদের দায়বদ্ধতা পরিপালন করবে বলে তিনি আশা করেন। তাঁর প্রত্যাশা, নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজভূমিতে নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক সংস্থা, দেশ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করার জন্য অনুরোধ জানান।

আলোচকেরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাঁদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের মানবীয় উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তাঁরা। সবাই এ সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, এ সমস্যার শিকড় মিয়ানমারে নিহিত। প্যানেল আলোচকেরা মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরূপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান।

জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র, সুশীল সমাজসহ অন্যান্য অংশীজন এ ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।

একই দিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বজকিরের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনার টিকাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় উঠে আসে।

মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ সেশন আহ্বান করার জন্য ভলকানকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। করোনার টিকাকে ‘গ্লোবাল পাবলিক গুড’ বা বৈশ্বিক জনপণ্য হিসেবে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। এ ক্ষেত্রে সবার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ভলকানকে তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভলকানকে আমন্ত্রণ জানান আব্দুল মোমেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক ভূমিকার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান ভলকান। এ ছাড়া জাতিসংঘ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর অফিসকে সহযোগিতার জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।