কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও আটক-জরিমানা
বাংলাদেশে টানা সাতদিন ধরে করোনায় শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু
বাংলাদেশে করোনায় টানা এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক শতাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৪ জন।
এর আগে গত ১ জুলাই সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর গতকাল শুক্রবার (২ জুলাই) মারা যান ১৩২ জন।
সর্বাত্মক লক-ডাউনের তৃতীয় দিন আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬ হাজার ২১৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এ সময় রংপুর বিভাগে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ বিভাগে ১৪ জন মারা গেছেন। এটাই রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। সেই সাথে বেড়েছে সংক্রমণের হারও। সংক্রমণের হার ২১ দশমিক ৫৬।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর ধারণ ক্ষমতা না থাকায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ৩৩ নং ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট হিসেবে চালু করা হচ্ছে রবিবার থেকে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ১০০ জনকে চিকিৎসা দেয়া যাবে। তবে ওই ইউনিটে আইসিইউ বেডের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
করোনার অন্যতম হটস্পট সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরায় চিরকুট লিখে রেখে করোনা আক্রান্ত রোগী আজগার আলী (৬০) আত্মহত্যা করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে কলারোয়া উপজেলার ইলিশপুর গ্রামে। শনিবার ভোরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
কলারোয়ার উপজেলার কেরালকাতা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোরশেদ জানান, আজগর আলি ১৪ দিন ধরে করোনা পজিটিভ অবস্থায় বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার ভোরে তিনি বাড়ির পাশে আম গাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, আজগার আলি আত্মহত্যার আগে একটি কাগজে লিখে গেছেন, করোনার চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। খরচের টাকা তিনি সামলাতে পারছেন না। এ জন্য তিনি এ পথ বেছে নিয়েছেন।
করোনা কবলিত জেলা নাটোরে মনিরুল ইসলাম (৩২) নমের একজন নৈশ-প্রহরীকে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভেবে অটোরিকশায় উঠতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে পথেই মারা যান তিনি। আজ শনিবার সকাল ছয়টার দিকে নাটোর রেলস্টেশন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত ব্যক্তি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ-প্রহরী ছিলেন। তার বাড়ি জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বৃ-চাপিলা গ্রামে।
সদর থানা পুলিশ ও বাজারের দোকানিরা জানান, শনিবার সকাল ছয়টার দিকে হাতে ক্যানুলা লাগানো এক যুবক বাজারের একটি দোকান এসে সিগারেট কেনেন। এরপর তিনি কাঁপতে শুরু করেন। তখন তিনি একটি অটোরিকশায় ওঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু করোনা রোগী মনে করে চালক তাকে অটোরিকশায় উঠতে দেননি। পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে খবর দেয়া হয়েছিল। তারা পৌঁছানোর আগেই যুবকটি মারা যান। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরে লাশটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। মৃত যুবকের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামী গতকাল শুক্রবার অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি হন। কাউকে না বলে তার স্বামী হাসপাতালের বাইরে চলে যান।
কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও আটক-জরিমানা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা সাত দিনের কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে আজ তৃতীয় দিনেও মাঠে রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা।
শনিবার (০৩ জুলাই) সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিতে দেখা গেছে তাদের। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গত দু'দিনের মতো আজও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের গ্রেপ্তার ও জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সর্বাত্মক লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানী জুড়ে মানুষের চলাচল বেড়েছে। এদিন রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নানা প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তারাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে বাজার ও দোকানপাটে ভিড় করছেন। মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানতে নারাজ তারা।
লকডাউনের হয়রানি
কঠোর লকডাউনের কবলে আজ সকাল থেকেই রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর পুলিশ চেকপোস্টে আটকা পড়ছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ সময় নিজেদের পরিচয়পত্র বা কারখানার কাগজপত্র দেখিয়েও ছাড়া পায়নি তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা। অনেকে আবার পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের পথে। #
এআরকে/৩