করোনা নিয়ন্ত্রণে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য এবং বিশ্লেষক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক-সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন, জনগণ ঠিকমতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, মাস্ক ব্যবহার করলে লকডাউনের প্রয়োজন হয় না । আর স্বাস্থ্যবিধি না মেনে উদাসীনতা প্রদর্শন করলে লকডাউন অর্থহীন।
আজ মঙ্গলবার সকালে নিজ সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদিনই সংক্রমণ আগের দিনের হারকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মাস্ক পরার পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঠিকমতো মাস্ক পরিধান করোনা সংক্রমণ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।
ক্ষমতাসীন দলের এ মুখপাত্র উল্লেখ করেন, একটা সময় অনেকে মনে করতেন গ্রামের মানুষের করোনা হবে না, এ ধারণা ভুল প্রমাণ করে ভাইরাসের সংক্রমণ এখন গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, নিজের সুরক্ষার জন্য সতর্ক না হলে, উদাসীনতা দেখালে কেউ আমাদের সুরক্ষিত করতে পারবে না ।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘একসময় হয়তো হাসপাতালে বেড বাড়িয়েও রোগী সামাল দেওয়া যাবে না, সেই পরিস্থিতি মাথায় রেখে হাট-বাজারে বা চায়ের দোকানে জটলা তৈরি না করে সতর্কভাবে চলাফেরা এবং মাস্ক পরিধানের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি সামজিক দূরত্ব বজায়সহ অন্যান্য সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
লকডাউনকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও করোনাকে ফাঁকি দেওয়া যায় না, তার প্রমাণ অতিসংক্রমণ এবং মৃত্যুর উচ্চহার- এমনটি উল্লেখ করে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী উৎসবের যে সুযোগ করে দিয়েছেন তার সদ্ব্যাবহার করার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবারা প্রতি আহ্বান জানা ওবায়দুল কাদের ।
কেউ যেন দায়িত্বহীনভাবে ফেরিঘাট, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল এবং কোরবানীর পশুর হাটে বাঁধভাঙা ভিড় সৃষ্টি না করে, সেদিকে সবাইকে কঠোর সতর্কতা হওয়ার আহ্বানর জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তা না হলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
এদিকে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াত সচল করতে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ সময় গণপরিবহন চলাচল, দোকান-শপিংমল খুলে দেওয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তবে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্তও একই সাথে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, লকডাউনে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা সংক্রমণ ঠেকাবার একটা উপায় হতে পারে তবে এর ক্লিনিকাল দিকটিও গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, প্রত্যেকের মাস্ক পরিধান করা, রোগীকে সপরিবারে আইসলেশনে রাখা এসব স্বাস্থ্য বিধি পালনে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া, ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউনের কঠোরতা শিথিল করার ব্যাপারে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে বক্ষব্যাধী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আবদুস সাকুর খান আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, এর ফলে মানুষের মাঝে মেলামেশা বৃদ্ধি পাবে, সংক্রমণ ছড়াবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে।
ওদিকে, সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, এখন যে হারে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে, সবার টিকা নেওয়াটাই প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমরা চাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অডিটরিয়ামে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে গণটিকা কর্মসূচি পরিদর্শনে এসে ডাক্তার সেব্রিনা ফ্লোরা এ কথা বলেন।
তবে তিনিও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আমরা যতই প্রস্তুতি নিই না কেন রোগী কমাতে না পারলে কাজ হবে না। এক্ষেত্র সাধারণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, জীবিকার কারণে বাধ্য হয়ে অনেক সময় অনেক কিছু খুলে দিতে হয়। জীবিকার জন্য যে কাজগুলো প্রয়োজন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সেগুলো করে সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেহেতু আমরা সেটি করি না, সে কারণে লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধিগুলো সঠিকভাবে মানতাম তাহলে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হত। আমরা নিজেরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখলেই কভিড নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। এ সময় তিনি স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।