বাংলাদেশে নতুন আতংক শিশুদের করোনা এবং প্রলম্বিত করোনা: বিশ্লেষক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে কোভিড সংক্রমণের ভয়াবহতার মাঝে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে শিশুদের মধ্যে মারাত্মক ভারতীয় ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্ট’। আর নতুন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রলম্বিত বা লং করোনা।
গত জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আগত এবং ভর্তিকৃত কোভিড-১৯ আক্রান্ত ১২ জন শিশুর নমুনার জিনোম সিকুয়েন্স করে শতভাগের শরীরে ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’ শনাক্ত হয়েছে। এসব শিশুদের মধ্যে নবজাতক থেকে ১৬ বছর বয়সী (স্কুলগামী) শিশুরা অন্তর্ভুক্ত ছিল। আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগেরই বয়স ১০ বছরের নিচে। সর্বনিম্ন আট মাস বয়েসের শিশুর দেহেও ডেলটা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মেয়ে শিশুরাও সমানভাবে এই ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত ও আক্রান্ত হচ্ছে। ৫০ ভাগ ছেলে শিশু এবং ৫০ ভাগ মেয়ে শিশুর মধ্যে এই ভেরিয়েন্ট এর উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯৫ ভাগ শিশুর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ এবং ৭০ ভাগ শিশুর সর্দি ও কাশি ছিল। এর মধ্যে একজন শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আবদুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক ও অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা। গবেষণায় প্রাপ্ত সিকোয়েন্স-ডেটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার সংস্থা ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা’-তে সংগৃহীত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ আঞ্জুমান আরা ইসলাম ফ্রেদিও তেহরানকে জানান, শিশুদের মধ্যে ডেলটা ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি সত্যি উদ্বেগজনক। তবে তাদের বিশেষায়িত হাসপাতালটিতে এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত লোকবল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি যথেষ্ট রয়েছে।
নতুন উদ্বেগের বিষয় হতে যাচ্ছে লং কোভিড
ওদিকে ভিন্ন এক গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থতা বা ‘লং কোভিড’-এ ভুগছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে বলছেন, কভিড তো বটেই, নতুন করে উদ্বেগের বিষয় হতে যাচ্ছে লং কোভিড।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৭ জন গবেষকদের একটি দল লং কোভিড নিয়ে গবেষণা করে এমন তথ্য পেয়েছেন । ২০২০ সালের মে মাস থেকে শুরু করে এ বছরের মে মাস পর্যন্ত এক বছর ধরে বাংলাদেশের দুই হাজারের বেশি কভিড রোগীর উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, লং কোভিডের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, ভুলে যাওয়া, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, হৃৎস্পন্দনের ওঠানামার মতো উপসর্গ থাকে। আর এটি তিন মাস থেকে শুরু করে দেড় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কোভিড আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভেন্টিলেটারে থাকার পর নানাধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণে বেঁচে যাওয়া প্রচুর সংখ্যক রোগীর শরীরে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা যাচ্ছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩০ থেকে শুরু করে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের মধ্যে লং কোভিডে ভোগার প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া, লং কোভিডে আক্রান্ত হবার প্রবণতা পুরুষের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লং কভিড মানুষের শারীরিক ও মানসিক-দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তারা বলছেন, কোভিড আক্রান্ত মানুষ সুস্থ হওয়ার পর অনেক দিন পর্যন্ত তার শরীরে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা থাকে। করোনা থেকে সেরে উঠলেও এসময় স্নায়ুতন্ত্রীয় জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন, রোগীর ঘুম কম হতে পারে, কখনো রাগ খুব বেড়ে যায়, হঠাৎ অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যায় আবার অনেক সময় হতাশ হয়ে যায়। এ সময় কানে ঝি ঝি শব্দ করা, মাথা ঘোরা, বমি ভাব হওয়া, বুক ধড়ফড় কর -এগুলো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। #
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।