বরিশালে ইউএনও-ওসি’র বিরুদ্ধে মামলা, সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i96280-বরিশালে_ইউএনও_ওসি’র_বিরুদ্ধে_মামলা_সরকার_ও_বিরোধী_দলের_প্রতিক্রিয়া
বরিশালে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে  হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল মল্লিকের নামে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
(last modified 2025-10-12T12:48:31+00:00 )
আগস্ট ২২, ২০২১ ১৮:১৬ Asia/Dhaka

বরিশালে ইউএনওর সরকারি বাসভবনে  হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজালাল মল্লিকের নামে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলার আবেদনে ইউএনও মুনিবুর রহমানকে আসামি করার পাশাপাশি তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাঁচজন আনসার সদস্যকেও আসামি করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম উল্লেখ নেই। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আজ রোববার সকালে বরিশালের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহর আদালতে মামলা দুটির আবেদন করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদার এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।

আজ দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম খান কায়সার জানান, দুটি মামলার আবেদনেই ইউএনও মুনিবুরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ অভিযোগ দুটি গ্রহণের পর তা আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট রাতে নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোক দিবস উপলক্ষে  প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়।

এ ঘটনায়, বৃহস্পতিবার ইউএনও মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ৭০ থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এদিকে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক বাদী হয়ে পৃথক অপর একটি মামলা করেন। দুটি মামলায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।

ইউএনও এবং পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ২১ আসামিকে আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে আদালতে হাজির করে তাঁদের জামিন আবেদন করা হয়। অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের জেলা কারাগারে পাঠান। একই সঙ্গে তাঁদের সুচিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

বরিশালের বিষয়টি একান্তই স্থানীয়: তথ্যমন্ত্রী

এদিকে, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলা ও পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন “বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন” যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, সেটিকে ‘চটজলদি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তবে এ নিয়ে কোনো সংকট নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী  বলেন, বরিশালের বিষয়টি একান্তই স্থানীয়। সেখানে ত্বরিত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তে বেরিয়ে আসবে, আসলে কী ঘটেছিল। এর আগে বিশেষ কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না তিনি।

ওই ঘটনায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়রকে আসামি করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলো কি না? আবার প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিবৃতি দিয়ে মেয়রকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে, এতে দল ও সরকার বিব্রত কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি স্থানীয় ঘটনা, বিচ্ছিন্ন বিষয়। মামলা যে কারও বিরুদ্ধে হতে পারে। ইতিপূর্বে অনেক মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এটি প্রথম নয়। মামলা হলে সেটি তদন্তে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা সমীচীন নয়। অভিযোগ দায়ের হতে পারে, অভিযোগ সঠিক কি না, সেটি তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে।’

অন্যদিকে প্রশাসনের সূত্রগুলো বলছে, মেয়রের চাপে দীর্ঘদিন ধরেই বরিশালের স্থানীয় প্রশাসন ক্ষুব্ধ। বুধবারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। মেয়রসহ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আমলাদের অবস্থান অনড় আছে। তবে তাঁদের সংগঠনের বিবৃতির পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসায় আমলাদের ভূমিকা প্রথম দিকের মতো জোরালো দেখা যাচ্ছে না।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক কোন প্রতিপক্ষ জড়িত না থাকলেও স্থানীয় রাজনীতিতে বিভেদের একটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, অপসারণ করা ব্যানার-ফেস্টুনগুলো ছিল বরিশাল সদরের সংসদ সদলশ্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থকদের লাগানো। বরিশালের রাজনীতিতে মেয়র পরিবারের সঙ্গে জাহিদ ফারুকের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সুবিদিত।

বরিশালে প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই; সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। এখন নির্বাচিত প্রতিনিধি বলতে তারা যা বোঝাচ্ছে সেই ধরনের লোকগুলো আওয়ামী লীগের। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিকেলে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু বরিশাল না। ইতোপূর্বে অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি যে, প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যারা দায়িত্বে আছেন তাদের একটা সংঘর্ষ হচ্ছে, সংঘাত হচ্ছে। বাংলাদেশ বর্তমানে রাষ্ট্র হিসেবে যে ব্যর্থ হচ্ছে এটা তার একটা লক্ষণ।

এই অবস্থায় থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। বলেন, ‘অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে একটা সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে আমাদের এখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাদের বাধ্য করতে হবে যে, একটি নিরপেক্ষকালীন সরকারের মধ্য দিয়ে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন হতে পারে। একটি পার্লামেন্ট গঠন হতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে।’

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।