সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১ ১৯:৪০ Asia/Dhaka
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকারের: বন্যায় বিপর্যস্ত অসংখ্য স্কুল কলেজ

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ঘোষণায় আনন্দিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকগণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে ধোয়ামোছার কাজ।

তবে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩টি জেলা বন্যকবলিত থাকায় সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান চালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এদিকে, বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার উপর বইছে, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তুরাগ, কালিগঙ্গা, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানি।

অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও সেখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনই ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বন্যা কবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে টাংগাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেডিও তেহরানকে জানান, তার এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ বা আশেপাশে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে শ্রেণীকক্ষে কোথাও পানি উঠেনি। বন্যা যদি না বাড়ে তবে ১২ তারিখে তারা ক্লাস খুলতে পারবে। আর পানি বাড়লে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে ।

এদিকে, বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত চিলমারীতে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। রৌমারীতে ৪টি স্কুল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যার পানি উঠেছে ২৩টি প্রাথমিক ও ৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তবে সেখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরিচালনার উপযোগী করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ৯ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি হাইস্কুলে বন্যার পানি উঠেছে। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি ওঠায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পদ্মার ভাঙনের মুখে রয়েছে। ব্লক, জিওব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পাবনার চাটমোহরের ২২০টি প্রাথমিক এবং ৮৭টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি না কমলে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে না।

শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এখানকার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে। চৌহালীতে যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে গত দেড় বছরে প্রায় ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাস করেছে যমুনা নদী। ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। যাতায়াতের রাস্তা ও খেলাধুলার মাঠ ডুবে রয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি না কমলে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা সম্ভব হবে না।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। সম্প্রতি বন্যায় ২৮টি সরকারি প্রাথমিক ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে। তা না হলে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পাশের উঁচু জমি বা ভবনে ক্লাস নেওয়া হবে।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/৬

ট্যাগ