বাংলাদেশে ই-কমার্স-এর ফাঁদে প্রতারিত লক্ষ গ্রাহক: দায় নেবে না সরকার
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i98386-বাংলাদেশে_ই_কমার্স_এর_ফাঁদে_প্রতারিত_লক্ষ_গ্রাহক_দায়_নেবে_না_সরকার
বাংলাদেশে ই-কমার্সের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীরা। কোনোরকম নজরদারি ছাড়াই একটি দুর্বল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্সভিত্তিক নানান প্রতিষ্ঠান খুলে দেদার চলছিল ব্যবসা।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
অক্টোবর ০৯, ২০২১ ১২:৫৯ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে ই-কমার্সের ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীরা। কোনোরকম নজরদারি ছাড়াই একটি দুর্বল কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে অনলাইন কেনাকাটা বা ই-কমার্সভিত্তিক নানান প্রতিষ্ঠান খুলে দেদার চলছিল ব্যবসা।

করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ঘরে বসে জরুরি ওষুধ-পত্র, খাদ্যদ্রব্য এমনকি বাজার-সদাই পেতে এমন সেবা গ্রহণ করেছেন।  তবে এরই মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী সময়মত পণ্য না পাওয়া বা নিম্ন মানের পণ্য সরবরাহের অভিযোগ আসতে  শুরু করে। অনেকে বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য পাবার আশ্বাসে টাকা দিয়ে প্রতারিত হবার কথা জানান। 

ই-কমার্সের জালে প্রতারিত বিনিয়োগকারী এবং গ্রাহকেরা গতকাল রাজধানীতে শাহবাগ মোড়ে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সাত দফা দাবি জানিয়ে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেবার দাবি করেছেন।

টিপু মুনশি

‘সরকার দায় নেবে না’

সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকালই রংপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশে অন্তত ২০ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। গ্রাহকরা কম মূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা কম দামে পণ্য কেনার সময় তো সরকারকে জানায়নি। তাদের (গ্রাহকদের) ক্ষতির দায় সরকার নেবে কেন? তবে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কাজ করছে।’

রুহুল কবির রিজভী

'সরকার দুর্নীতি লুটপাটে দেশ ও জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়েছে'

ওদিকে, বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সরকার দুর্নীতি লুটপাটে দেশ ও জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। অর্থনীতি ফোকলা করে ফেলেছে। এই করোনা মহামারিতে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এর মধ্যে ই-কমার্সের নামে ডজন ডজন প্রতিষ্ঠান, নানা নামে, নানা রংয়ে-ঢংয়ে জনগণের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে।

বিএনপি’র এ নেতা বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও দুর্নীতি মুক্ত থাকতে পারেনি। কারণ,  নিশিরাতে ভোট করা সরকারের আমলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতিকেই নীতি মনে করে। 

১৯ দফা করণীয় প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দপ্তর

একজন পুলিশ কর্মকর্তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ আগস্ট মামলা রুজু হবার পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয় ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়। এরপর গা-ঢাকা দেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা। পরে ভারতে পালাতে গিয়ে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পশ্চিমবাংলায়  কারাগারে আটক আছেন সোহেল রানা।

ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তার

এরপর ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেডসহ আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা ও মালিকদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ভোরে কিউকমের হেড অব সেলস, কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন অফিসার হুমায়ুন কবির নীরব ওরফে আরজে নীরবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এরই মধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ই-কমার্সের আড়ালে প্রতারণা ও বিদেশে টাকা পাচারের ব্যাপারে অনেক তথ্য উঠে এসেছে। আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে দেখছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

এ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক চিত্র ও ১৯ দফা করণীয় উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এতে বলা হয়েছে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১' নামে নীতিমালা কার্যকর থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। এ ক্ষেত্রে 'ডিজিটাল ই-কমার্স অ্যাক্ট' প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ক্রেতা পণ্য বুঝে পাওয়ার পরই মূল্য পরিশোধ করবেন- এটা নিশ্চিত করা জরুরি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায়ই মিছিল-মিটিং ও সড়ক অবরোধ করছেন। এই ইস্যু ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে এও বলা হয়, প্রতারণামূলক আচরণের কারণে অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে। আর এর ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।#