বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা: মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

বাংলাদেশে আবারো প্যাঁচ লেগেছে পেঁয়াজ নিয়ে। এক সপ্তাহের ব্যাবধানে ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় উঠে গেছে। বাজারে দাম বেড়েছে চিনি, ভোজ্য তেল মসুর ডালসহ সব রকম নিত্যপণ্যের। করোনাকালীন আয় রোজগার কমে যাওয়া গরীব আর সীমিত আয়ের মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের জীবন আরও বেশী দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার ব্যস্ত লুটপাটে; জনগণের দুর্দশার দিকে তাদের খেয়াল নেই।

এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী এক মাস পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নাজুক থাকবে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসলে এ পরিস্থিতি পরিবর্তন আসবে।

সরকারের বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ আজ দুপুরে সচিবালয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পেঁয়াজের শতকরা ৮০ ভাগ দেশেই উৎপাদন হয়। ২০ শতাংশ আমদানি হয়, যার অধিকাংশ ভারত থেকে। ব্যাঙ্গালোরে অতি বৃষ্টির কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। আংশিক দায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের।

পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারে অনুরোধ

এদিকে, জনস্বার্থে পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল ও চিনির শুল্ক কমাতেও অনুরোধ করেছে মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় পেঁয়াজ পরিবহনকারী ট্রাক চলাচলে যাতে জটলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন দুটি দল ঢাকাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ বাজার তদারক করবে। আর সারা দেশে জেলা উপজেলার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, টিসিবি সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রতিদিন সারা দেশে ৪০০ ট্রাকে ৪০০ থেকে ১০০০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ছাড়া ভারত ও তুরস্ক থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও পেঁয়াজ সংগ্রহের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

দেশে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে: বাণিজ্যমন্ত্রী

এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ আছে, যা দিয়ে আগামী আড়াই থেকে তিন মাস চলতে পারে। ভারত ছাড়া মিয়ানমার থেকে যদি পেঁয়াজ আনা যায়, তাহলে কিন্তু এত প্রেশার (চাপ) পড়ার কথা না। তবে বৃষ্টিজনিত কারণে কিছুটা দাম বেড়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব, যেন দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা যায়।

কিছুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে: কৃষিমন্ত্রী

অপরদিকে, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক দাবি করেছেন, বাজারে অনেক পণ্যেরই দাম কম। আবার কিছু কিছু পণ্যের দাম বেশ বেড়েছে। এর মধ্যে পেঁয়াজ একটি। তবে পেঁয়াজের দাম কিছুদিনের মধ্যেই কমে আসবে।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটরিয়ামে ‘শাকসবজি, আলু, ফলমূল ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণীত খসড়া রোডম্যাপ’ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা পেঁয়াজ নিয়ে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা হয়েছিল, যেন চাষীরা ভালো দাম পায়। তার একটি প্রভাব বাজারে পড়েছে। কিন্তু আমদানি এখনও চালু আছে, বাজার স্বাভাবিক করতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।