শাহবাগে ‘গণঅনশন ও অবস্থান’ কর্মসূচিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i99030-শাহবাগে_গণঅনশন_ও_অবস্থান’_কর্মসূচিতে_সংখ্যালঘু_সম্প্রদায়ের_৮_দফা_দাবি
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার-বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
অক্টোবর ২৩, ২০২১ ১৭:১২ Asia/Dhaka
  • শাহবাগে ‘গণঅনশন ও অবস্থান’ কর্মসূচিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবি

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার-বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন।

আজ (শনিবার) রাজধানীর শাহবাগে অবিস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকাল ছয়টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘গণঅনশন, অবস্থান ও বিক্ষোভ'  কর্মসূচি থেকে এসব দাবি জানান তারা।

তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো- সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল মন্দির, বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের পুণর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করাসহ আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যুন ২০ লক্ষ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা;  নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা; সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া; প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যেসব প্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরকেও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক রাজনৈতিক পদক্ষেপগ্রহণ করা; ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসমুক্ষে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

সকাল ৬ টা থেকে রাজধানীর শাহবাগে এই কর্মসূচি শুরু করে। দুপুর সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে অনশন করার পর প্রায় ১ ঘণ্টা শাহবাগ মোড় আটকে রাখে বিক্ষোভকারীরা। এসময় শাহবাগ মোড়ের চারপাশে রাস্তায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। সাড়ে ১২ টার দিকে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির এস অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ করা হয়। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম ট্রাস্টি  কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘হামলার পর আমি রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, সেখানে তারা বলেছে আমাদের মা আসবে কবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তাদের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সংহতি জানান।’

তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের মধ্যে যারা হামলা করেছে, তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে ক্ষমা চওয়া। প্রত্যেক মসজিদের ইমামকে বলতে হবে এগুলো অনৈসলামিক কাজ হয়েছে।’

গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আমরা সংক্ষুব্ধ, বিক্ষুব্ধ। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ব্যবসা করে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে, আবার রাষ্ট্রকে বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ, এটি চরম ভাঁওতাবাজি। ভাঁওতাবাজি করে রাষ্ট্র চলতে পারে না।

কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা জোরদার ও  দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার বিচারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, এই হামলা শুধু হিন্দুদের ওপর হামলা নয়, গোটা বাঙালির ওপর হামলা। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের একটা অংশ এর জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, এবারের পূজাতে যে ঘটনা ঘটেছে, এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তা আটকানো উচিত। প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করে, তদন্ত করে বিচার করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশে অসাম্প্রদায়িক প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার বলেন, এ দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি করা না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সমস্যাটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা, এই সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

গণ-অবস্থানে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘পবিত্র কোরআন অবমাননার জন্য হিন্দুদের ওপর হামলা চালানো হয়নি; বরং তাদের ওপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই কোরআন শরিফ মন্দিরে রেখে আসা হয়। এবারের এ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, শুধু প্রতিবাদ করলে হবে না, প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে।’

মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা চলছে, তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না। যাঁরা কোনোদিন রাস্তায় নামেননি, তাঁরা ন্যায়বিচারের দাবিতে সেই কাকডাকা ভোরে থেকে সড়কে প্রতিবাদ করছেন। আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে চাই না।’

শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অরুণ কুমার বলেন, সারা দেশে একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক সৃষ্টি করা হয়েছে। সারা দেশে ঘটনাটি যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে বন্ধন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে অর্জন বাংলাদেশের, মানুষের মধ্যে যে বিশ্বাস, সেখানে আঘাত লেগেছে। মানুষের মধ্যে যে বিশ্বাস সেটি কবে ফিরবে, আদৌ ফিরবে কি না, তা কেউ জানে না।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে। এসব ঘটনা সবার আগে বিচার করতে হবে। কারণ, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এটা আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের নেতা–কর্মীরা। এ আয়োজনে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ রবি দাস উন্নয়ন পরিষদের নেতা–কর্মীরা।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।