ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করল নিরাপত্তা পরিষদ
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং পণবন্দিদের মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনা প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। গতরাতে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং রাশিয়া ভোটদানে বিরত থাকে।
সাত ধারাবিশিষ্ট ২৭৩৫ নম্বর প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, তিন ধাপে গাজা উপত্যকায় একটি সার্বিক যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবে গত ৩১মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের পক্ষ থেকে গ্রহণ করার বিষয়টিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি হামাসকেও তা মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে গাজায় অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য হামাস ও ইসরাইল উভয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, এটি কার্যকর হলে তিন ধাপে নীচের তিনটি ফল পাওয়া যেতে পারে।
৩ ধাপে যেভাবে বাস্তবায়িত হবে:
ক) প্রথম ধাপ: ৬ সপ্তাহের জন্য গাজায় তাৎক্ষণিক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, নারী, বৃদ্ধ ও আহত পণবন্দিদের মুক্তি, কিছু নিহত পণবন্দির লাশ ফেরত, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, গাজার উত্তরাঞ্চলসহ সমস্ত উপত্যকার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন এবং গাজার সর্বত্র ব্যাপকভিত্তিক মানিবক ত্রাণ বিতরণ।
খ) দ্বিতীয় ধাপ: গাজায় আটক অবশিষ্ট পণবন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে উভয়পক্ষের সম্মতিতে স্থায়ীভাবে সংঘাতের সমাপ্তি এবং গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার।
গ) তৃতীয় ধাপ: কয়েক বছরব্যাপী গাজা উপত্যকা পুনর্নির্মাণের মহাযজ্ঞ শুরু এবং গাজায় নিহত অবিশষ্ট পণবন্দিদের লাশ তাদের পরিবারবর্গের কাছে হস্তান্তর।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি প্রাথমিকভাবে ৬ সপ্তাহের জন্য ঘোষিত হলেও দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলে আলোচনা যতদিন চলমান থাকবে ততদিন যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে। অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি ৬ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান থাকবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
প্রস্তাবটি উভয়পক্ষ মেনে নেয়ার পর তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে এবং জাতিসংঘের সকল সদস্যদেশকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার জনসংখ্যার কাঠামোয় কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না এবং এই উপত্যকার আয়তন হ্রাস পেতে পারে এমন কোনো ব্যবস্থাও নেয়া যাবে না।
১০ জুন রাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে গাজায় তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হওয়ার পর ইসরাইলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রটি গঠিত হবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে নিয়ে এবং যেটি শাসন করবে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষ।
গাজা উপত্যকায় গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল যে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতি সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে মার্কিন সরকার। তবে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে মাথায় রেখে গত ৩১ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, ইসরাইলের পক্ষ থেকে তিন ধাপের প্রস্তাবটি তাকে দেয়া হয়েছে। গতরাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে সেটি মূলত মৌখিকভাবে বাইডেনের ঘোষিত পরিকল্পনাটির পরিমার্জিত লিখিত সংস্করণ। হামাস প্রস্তাবটিকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানালেও ইহুদিবাদী ইসরাইল এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। #
পার্সটুডে/এমএমআই/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।