অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন: হামলা, সংঘর্ষ, গুলিতে সারা দেশে নিহত ৯১
(last modified Sun, 04 Aug 2024 09:23:21 GMT )
আগস্ট ০৪, ২০২৪ ১৫:২৩ Asia/Dhaka
  • রংপুর
    রংপুর

বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন সংঘর্ষ ও গুলিতে সারাদেশে ৯১ জন নিহত হয়েছে। আজ দিনভর সংঘর্ষে নরসিংদীতে ৬ জন, ফেনীতে ৮ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ মোট ২২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪ জন, রাজধানী ঢাকায় ৬ জন, বগুড়ায় ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, রংপুরে ৪ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ৫ জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্যসহ ৩ জন, শেরপুরে ২জন, জয়পুরহাটে ১ জন, হবিগঞ্জে ১জন, ঢাকার কেরাণীগঞ্জে ১ জন, সাভারে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৯১ জন নিহত হয়েছেন।

পাবনা: পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন।

আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হল সংলগ্ন এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ রোববার সকাল থেকেই পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে শহরের টাউন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা।

এর আগে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় তারা বাধার শিকার হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

টাউন হল এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবস্থান করে আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে অতর্কিত গুলির আঘাতে ৩ জন নিহত হয়।

ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

এসময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।

ফেনী:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।  রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ, গুলিবর্ষণ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।

রংপুর: রংপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ নিহত হয়েছেন। রোববার (০৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর পায়রা চত্বরে এই ঘটনা ঘটে। নিহতের একজনের নাম হারাধন। তিনি রংপুরের সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে শহরজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দুপক্ষই অবস্থান নেয়।

বগুড়া: বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৩ জন মারা গেছেন। রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত একজনের নাম মুনিরুল ইসলাম (৩৪)। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকায়। মুনিরুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। অন্যজনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বীসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে শহরের সব রুট দখলে নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছাত্ররা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৯ জন নিহত হয়েছেন।

রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানা গেছে। তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বরিশাল : বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।

লংমার্চ টু ঢাকা

চলমান অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই আবারও নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আজ দুপুরে আগামী দুইদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

এর মধ্যে আগামীকাল সোমবার নিহতদের স্মরণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘শহীদ স্মৃতিফলক’ উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একইদিন, সকাল ১১টায় ঢাকার শাহবাগে শ্রমিক সমাবেশ এবং বিকেল পাঁচটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে বিক্ষোভ-আন্দোলন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আজ রোববার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

পার্সটুডে/এমএআর/৪

ট্যাগ