ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বিজিবির হাতে আটক সাবেক বিচারপতি মানিক
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
জকিগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন জানায়, গতকাল (শুক্রবার) রাত ১০টার দিকে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা সীমান্ত এলাকা থেকে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করা হয়েছে। পরে রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে সীমান্তবর্তী বিজিবি ক্যাম্পে রাখা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার মো. আসাদুন্নবী বলেন, 'ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করা হয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, 'সকালে বিজিবি সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য জায়গায় মামলা থাকলে তাকে সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।'
বিজিবির হাতে আটকের আগে ও পরের একাধিক ভিডিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভিডিওর বক্তব্য থেকে জানা যায়, স্থানীয় দালাল ধরে তিনি ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন। আটকের সময় বিজিবি সদস্যদেরকে মানিক জানান, তার সঙ্গে বাংলাদেশি এবং ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে। নগদ টাকা আছে ৪০ হাজার। আগের দিন তার সঙ্গে থাকা ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা দুই যুবক মারধর করে নিয়ে গেছে। শুধু সীমান্ত পারের জন্য নৌকার মাঝিকে ১৫ হাজার টাকা দেন।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিচারপতি মানিককে প্রশ্ন করছেন কয়েকজন। এসময় তিনি তার নাম বলছেন। নিজের অসুস্থতার কথা বলছেন। দালালদের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার কথা বলেন। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার তথ্য জানান।
কেন পালাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন 'ভয়ে পালাচ্ছি'। কার ভয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রশাসনের।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায় জঙ্গলে কলাপাতা বিছিয়ে তিনি শুয়ে আছেন। কেউ একজনের সঙ্গে কথা বলছেন। তাকে টাকা দেয়ার কথা বলছেন। ওই ব্যক্তি বলছেন আমাদের টাকা লাগবে না।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে যান। বিচারপতি মানিক বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোর সমর্থক ছিলেন। সরকারের কার্যক্রম সমর্থন করে টকশোতে আলোচনা করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে জিয়াউর হক নামে এক আইনজীবী মামলার আবেদন করেন।
মামলায় অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আই’র টকশো ‘মেট্রোসেম টু দ্য পয়েন্টে’ জিয়াউর রহমানকে রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।
২০১৩ সালের ১৯ জুলাই ভিন্ন অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এছাড়া আসামিরা বিভিন্ন সময় জিয়া পরিবার নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছে বলে মামালর এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
পার্সটুডে/এমএআর/২৪