পার্বত্য তিন জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ঘোষণা
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ: নিহত ৩, পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারি
বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও সদর উপজেলায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ধনঞ্জয় চাকমা (৫০), রুবেল ত্রিপুরা (২৫) ও জুনান চাকমা (২০)।
আজ (শুক্রবার) সকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিআইজি পলাশ জানান, ধনঞ্জয় গত রাত সাড়ে ১০টায় এবং রুবেল ও জুনান রাত দেড়টায় মারা গেছেন। এদের মধ্যে ধনঞ্জয় দীঘিনালায় এবং রুবেল ও জুনান সদরে আহত হয়েছিলেন। খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রিপাল বাপ্পী চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীঘিনালা ও সদর উপজেলা থেকে আসা নয়জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এছাড়াও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের পায়ে, কোমরে ও পেটে গুলি লেগেছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সহিদুজ্জামান জানান, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছি।
উল্লেখ, মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যার জেরে বুধবার থেকে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালায় সাধারন শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে একদল দুবৃত্ত হামলা চালালে পরিস্থিতি সাম্প্রায়িক সসিংতায় রূপ নেয়। পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দীঘিনালা লারমা স্কয়ারে অর্ধশতাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নেয় পাহাড়িরা। রাতে পানছড়িতে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা সদরের নারায়নখাইয়া ও স্বনির্ভর বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পাহাড়িরা। এ সময় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের অন্তত ৩০টি বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়।
সহিংসতা এড়াতে খাগড়াছড়ি পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারি
সহিংসতা এড়াতে শুক্রবার দুপুর ২ট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজাজামান।
খাগড়াড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র রায় রায় ফৌজধারী কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা মতে আদেশে বলা হয় খাগড়াছড়ি সদর থানা এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালি সংগঠনের লোকজন আলাদা-আলাদাভাবে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এবং তৎপ্রেক্ষিতে সদর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রাপ্ত অধিযাজন পত্রে উক্ত এলাকার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি চরম অবনতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কতিপয় ব্যক্তি একত্রে মিলিত উক্ত স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নত হতে পারে প্রতিয়মান হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পৌরসভা এলাকায় শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যাবিধি ১৪৪ ধারা আরোপ করা হলো।
পার্বত্য তিন জেলায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের ঘোষণা
পার্বত্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আধা ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’। পরে আগামী ৩ দিন পার্বত্য তিন জেলায় অবরোধের ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় ছাড়েন।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে শতাধিক মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
এসময় বিক্ষুব্ধ জুম্ম জনতা ও পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের শুভাশীষ চাকমা বলেন, হামলার প্রতিবাদে আগামী তিন দিন অর্থাৎ, ৭২ ঘণ্টা পার্বত্য তিন জেলায় অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।