যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগ
(last modified Wed, 15 Jan 2025 08:55:00 GMT )
জানুয়ারি ১৫, ২০২৫ ১৪:৫৫ Asia/Dhaka
  • টিউলিপ সিদ্দিক\'এর পদত্যাগ
    টিউলিপ সিদ্দিক\'এর পদত্যাগ

দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরুর পর সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন তিনি। সিটি মিনিস্টার হিসেবে পরিচিত এই পদে থেকে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে ছিলেন।

(গতকাল) মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন টিউলিপ।প্রধানমন্ত্রী স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

পদত্যগপত্রে টিউলিপ উল্লেখ করেন, তিনি ভুল কিছুই করেননি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে টিউলিপ বলেন, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেলে সেটা সরকারের কাজ থেকে মনোযোগ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারত।

বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে ২০১৫ সালে লন্ডনের একটি আসন থেকে প্রথমবার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত জুলাইয়ে তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তারও নাম আসার বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার বিষয়টি সবাই জানে। যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিই, সে সময় আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি।’

পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য টিউলিপকে চিঠি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিধিবিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লাউরি ম্যাগনাস তদন্ত করেছেন। সেই তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করে কিয়ার স্টারমার টিউলিপকে জানান, তার বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাননি ম্যাগনাস। স্টারমার বলেন, ‘আপনার (টিউলিপ) জন্য দরজা খোলা রইল।’

তবে দুঃখজনক বিষয় হলো বাংলাদেশে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভ্যাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না।

বাংলাদেশে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

গত আগস্টে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ৯টি অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তাতে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে নাম আসে টিউলিপের। গত মাসে এ অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আদালতে দাখিল অভিযোগের নথির বরাতে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাড়তি ব্যয় দেখিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। রাশিয়ার সঙ্গে সেই চুক্তি করতে টিউলিপ সিদ্দিক সহযোগিতা করেন। চুক্তিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় ১০০ কোটি ডলার বেশি দেখানো হয়।

দুদকের অনুসন্ধান শুরুর পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

এরই মধ্যে গত সোমবার দুদক জানায়, তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপের মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। তিন মামলাতেই টিউলিপ সিদ্দিক ও শেখ হাসিনাকেও আসামি করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে অনিয়মের অভিযোগ

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে উঠে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় বিনা মূল্যে একটি ফ্ল্যাট উপহার নেন টিউলিপ। লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড এলাকায় একটি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা ফ্ল্যাটে কয়েক বছর বসবাস করেন টিউলিপ। ওই সময় নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ওই ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ হওয়ার পর পদত্যাগের জন্য টিউলিপের ওপর চাপ বাড়ছিল। টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেইডনক। বিরোধীদের পাশাপাশি দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোও টিউলিপের পদত্যাগ চাচ্ছিল।

টিউলিপ পদত্যাগ করার পরপরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট জানায়, লেবার পার্টির এমপি এমা রেনল্ডসকে নতুন অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/জিএআর/১৫