বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হলো ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি
(last modified Thu, 06 Feb 2025 10:03:09 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২৫ ১৬:০৩ Asia/Dhaka
  • ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হলো
    ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হলো

ভেঙে ফেলা হচ্ছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এক্সকেভেটর দিয়ে বাড়িটি ভাঙছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।বাড়িটির অনেকটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে।

গত সন্ধ্যা থেকে থেকে চলা কর্মসূচি কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে আবারও চলছে। শত শত মানুষ সেখানে রয়েছেন।

ফেসবুকে ঘোষিত 'বুলডোজার মিছিল' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। রাত ১০টার দিকে বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গুড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা

রাত ১১টার দিকে বাড়িটির সামনে আনা হয় ক্রেন এবং রাত সোয়া ১১টার দিক থেকে বাড়িটি ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। এতে কাজ না হওয়ায় আনা হয় এক্সকেভেটর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে ওই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এর পর থেকে বাড়িটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি ছিল গতকাল বুধবার। শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গতকাল রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ক্রেন ও এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়।

গতকাল রাত ৯টায় নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা চলে। গতকাল বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। সন্ধ্যা সাতটার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।

আজও সুধা সদনে আগুন জ্বলছে

সুধা সদনে আগুন

এদিকে, ধানমন্ডি ৫-এ অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন জ্বলছে এখনও।  গতকাল রাত সাড়ে ১০টার পর আগুন দেওয়া হয়। আগুন পুরো ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। তবে 'নিরাপত্তার অভাব ও বিক্ষুব্ধদের বাধার কারণে ফায়ার সার্ভিস সুধাসদনে আগুন নেভাতে যেতে পারেনি।'

আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে সুধা সদনে দেখা যায়, ভবনের দোতলায় আগুন জ্বলছে। বাড়িটির সামনে পড়ে আছে ফ্রিজ, খাট, ওয়ারড্রব, সোফাসহ নানা সামগ্রী। ভবনের নিচতলা থেকে চারতলার বিভিন্ন কক্ষে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা যায়। কোথাও কোথাও টাইলস খুলে ফেলা হয়েছে। পোড়া গন্ধ চারদিকে। বাড়িটির সামনে উৎসুক কয়েক শ মানুষের ভিড় দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যেসব অক্ষত জিনিসপত্র আছে, সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন।

আরেকটি ভবন (বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) ভাঙা হচ্ছে

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির পেছনের উত্তর দিকের ছয়তলা ভবন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভাঙা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, পেছনের ছয়তলা ভবনে শত শত মানুষ ঢুকছেন। ভবনটির ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তখন ভবনটির ভেতর থেকে হাতুড়ির আঘাতে নানা কিছু ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ভবনটি থেকে ধোয়া উড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও একাধিক সংগঠনের কার্যালয় ভাঙছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা।

কাউয়া কাউয়া স্লোগানে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

নোয়াখালিতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে  হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বড় রাজাপুর গ্রামের মিয়া বাড়িতে হামলা চালান তারা।

এসময় তাদের ‘নারায়ে তাকবির, কাউয়া কাউয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। আজ সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলার নিজস্ব ফেসবুক পেজ থেকে এই হামলার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে লিখা হয়, ‘নোয়াখালীর বিপ্লবীরা, বুলডোজার নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। মার্চ টু কাউয়া কাদেরের বাড়ি! আজ বেলা ১১টা।’

সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা কেউ বাড়ির ছাদে, কেউ বাড়ির ভেতরে, আবার কেউ বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন। তারা ‘নারায়ে তাকবির, কাউয়া কাউয়া’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে। আন্দোলনকারী বলেন, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আজ সেই রাগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন ছাত্র-জনতা। সবাই কাউয়া কাউয়া স্লোগান দিচ্ছে। এমন খারাপ রাজনীতি কেউ করলে তাদের এমন পরিণতি হবে, এটাই আমাদের শেষ কথা।

খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো শেখ বাড়ি

খুলনায় শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ভাঙচুরধ

খুলনায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি।

খুলনায় বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে ওই ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দুটি বুলডোজার চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত বাড়িটি ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত।

গতকাল রাতেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটিও বুলডোজার দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।

বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের বাড়ি। এ বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল উদ্দিনসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। মূলত ওই বাড়ি থেকেই পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।

কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে কুমিল্লা নগরের মুন্সেফবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পাবনা, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের মুর‌্যাল ভাঙচুর করা হয়।

বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাস ও শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাসের নাম ফলক মুছে দিয়েছে। এছাড়া পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলকও মুছে ফেলা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গুড়িয়ে ফেলেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষুব্ধরা পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বুধবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে।

বরিশাল সিটির সাবেক মেয়রের বাড়ি ভাঙচুর

বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদিক আব্দুল্লাহর বাসভবনে বৃহস্পতিবার ভোররাতে ভাঙচুর করেছে ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভবনটিতে ভাঙচুর ও বুলডোজার দিয়ে একাধিকবার ভবনের নিচের অংশে আঘাত করেন। এতে ভবনের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

একই ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়িতেও। ছাত্র-জনতা বুলডোজার দিয়ে তার বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়।#

পার্সটুডে/জিএআর/৬