নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ, ২২ মে জামিনের আদেশ
(last modified Mon, 19 May 2025 10:07:20 GMT )
মে ১৯, ২০২৫ ১৬:০৭ Asia/Dhaka
  • নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে
    নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে

বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের সময় হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে আজ সকাল ১০.২০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। সিএমএম আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ২২ মে জামিনের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

আদালতে নুসরাত ফারিয়াকে বিমর্ষ দেখা গেছে। কাঠগড়ায় ৩০ মিনিট রেলিং ধরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি। তার আইনজীবী কথা বলেন। শুনানির শুরুতে নুসরাতের আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার মক্কেল একজন সুপরিচিত অভিনেত্রী। অভিনয় তাঁর পেশা। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নুসরাত ফারিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষেও লেখালেখি করেছিলেন, সহমর্মিতাও প্রকাশ করেছিলেন।’

পিপির বক্তব্যে বিরোধীতা

তবে নুসরাতের আইনজীবীর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সিএমএম আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নুসরাত ফারিয়া অভিনেত্রী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী।’

পিপি ফারুক ফারুকী

পিপি আরও বলেন, ‘নুসরাত ফারিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বায়োপিকে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে খুশি করতে চেয়েছিলেন।’

সংরক্ষিত মহিলা আসনে নুসরাত ফারিয়া সংসদ সদস্য হতে চেয়েছিলেন বলেও আদালতের কাছে অভিযোগ করেন পিপি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হওয়ার কারণে নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেন তিনি।

পিপি আদালতকে আরও বলেন, নুসরাত ফারিয়া কেবল ফ্যাসিস্টের সহযোগী নন, তিনি অনলাইনে জুয়ার প্রমোট করছেন বলেও আদালতকে জানান পিপি। বলেন, ‘তিনি একটি জুয়ার অ্যাপসের শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন।’

উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক সারাহ ফারজানা হক  তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আগামী ২২ মে নুসরাত ফারিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশ হবে বলে জানান আদালত।

নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার  নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন

যদি কেস থাকে, কী করবেন, ছেড়ে দিলে আবার বলবেন ছেড়ে দিছেন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘এখন তাঁর নামে যদি কেস থাকে, আপনি কী করবেন?...ছেড়ে দিলে আবার আপনি কিন্তু...বলবেন স্যার আপনি ছেড়ে দিছেন...।’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা ১১টা ১২ মিনিটে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন,

'আমি সাধারনত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাবো। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকলো আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেফতার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিলো।

ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলাতো অনেকদিন ধরেই ছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নারভাসনেস থেকেই হয়তোবা এইসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এইসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরো সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবো—এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’#

পার্সটুডে/জিএআর/১৯