যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলাকে পশ্চিম গোলার্ধের জন্য হুমকি মনে করে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i155296-যুক্তরাষ্ট্র_কেন_ভেনেজুয়েলাকে_পশ্চিম_গোলার্ধের_জন্য_হুমকি_মনে_করে
পার্সটুডে:  ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলা পশ্চিম গোলার্ধের স্থিতিশীলতার জন্য একটি হুমকি।
(last modified 2025-12-20T13:16:22+00:00 )
ডিসেম্বর ২০, ২০২৫ ১৯:১২ Asia/Dhaka
  • মার্কো রুবিও
    মার্কো রুবিও

পার্সটুডে:  ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলা পশ্চিম গোলার্ধের স্থিতিশীলতার জন্য একটি হুমকি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে কারাকাসের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযোগ উত্থাপন করে মার্কো রুবিও বলেন, ভেনেজুয়েলা পশ্চিম গোলার্ধের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো পশ্চিম গোলার্ধে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। তিনি ভেনেজুয়েলাকে এই অঞ্চলের একটি বিশেষ ও ব্যতিক্রমী সমস্যা হিসেবে তুলে ধরেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের পুরোনো অভিযোগ পুনরাবৃত্তি করে রুবিও দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা সক্রিয়ভাবে মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যেগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

রুবিওর এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরেই ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে এক ধরনের আনুষ্ঠানিক কিন্তু ঘোষণাহীন যুদ্ধ শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ক্যারিবীয় সাগর ও ভেনেজুয়েলার উপকূলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং একটি তেলবাহী জাহাজ আটক ও জব্দও করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন পদক্ষেপগুলো এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন গত কয়েক বছর ধরেই ওয়াশিংটন ধারাবাহিকভাবে ভেনেজুয়েলার ওপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগ করে আসছে।

দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপমূলক নীতি অনুসরণ করে আসছে। এই হস্তক্ষেপের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এই অঞ্চলে বামপন্থী আন্দোলনের উত্থান নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ।

১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে হুগো চাভেজ ভেনেজুয়েলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বারবার এই বামপন্থী সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে, যাতে লাতিন আমেরিকায় এ ধরনের সরকারব্যবস্থার বিস্তার রোধ করা যায়।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বিপুল জ্বালানি সম্পদ, খনিজ সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান এবং উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রাম ও নিপীড়িত জাতির প্রতি সমর্থনের মতো রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের কারণেও যুক্তরাষ্ট্র সবসময় চেষ্টা করেছে এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের অনুগত সরকার ক্ষমতায় আনতে, যাতে তারা এই দেশগুলোর রাজনীতি ও সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই লাতিন আমেরিকাকে নিজের 'উঠোন' হিসেবে বিবেচনা করে এসেছে এবং চীন ও রাশিয়ার মতো দেশের যেকোনো প্রভাব বিস্তারকে নিজের স্বার্থের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখে। ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন যে, বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুতধারী এই দেশটি চীন ও রাশিয়ার মতো যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শক্তির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে এগিয়ে যেতে পারে।

এই উদ্বেগই ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ এবং নিষেধাজ্ঞার অন্যতম প্রধান কারণ। ওয়াশিংটন মূলত ভেনেজুয়েলার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হওয়া ঠেকাতে চায়। বাস্তবে, যুক্তরাষ্ট্র চায় এমন যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি কমিয়ে আনতে, যা লাতিন আমেরিকায় তাদের কৌশলগত অবস্থান ও জ্বালানি স্বার্থকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই চাপের জবাবে মাদুরো সরকার বারবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপ ভেনেজুয়েলার জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হওয়ার পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও গভীর করেছে। মাদুরো ও ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা বহুবার অভিযোগ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র পরিকল্পিতভাবে তাদের দেশকে প্রক্সি যুদ্ধ ও অস্থিরতার কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে।

বর্তমানে ভেনেজুয়েলাকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র মূলত এই দেশে নিজের হস্তক্ষেপকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিতভাবে ভেনেজুয়েলা সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় মাদক পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ তোলে, যেগুলোকে ওয়াশিংটন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনেজুয়েলা সরকারকেও 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দিয়েছে। এসব অভিযোগ মূলত ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপকে বৈধতা দেওয়া এবং নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক চাপের যৌক্তিকতা দেখানোর কৌশল—যার অনেকটাই বাস্তবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এই প্রেক্ষাপটে, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে 'ভেনেজুয়েলা হুমকি' উপস্থাপন করা হয়, তা বাস্তব হুমকির চেয়ে বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী ও ভুল নীতির প্রতিফলন, যা কেবল বৈশ্বিক সংকটই বাড়ায়নি বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএআর/২০