ইসরাইলি কারাগারে 'ফ্যাসিবাদ'-এর অভিযোগ হামাসের
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা
-
শার্মুশ শেইখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ ট্রাম্পের সঙ্গে আঞ্চলিক নেতারা
ইহুদিবাদি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে সই করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্য দেশের নেতারা।
গতকাল (সোমবার) মিশরের পর্যটন শহর শার্মুশ শেইখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ নথিতে সবার আগে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এই দলিলে স্বাক্ষর করেন।
দলিলে স্বাক্ষর করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, "এই পর্যায়ে পৌঁছাতে ৩,০০০ বছর লেগেছে। আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন? এবং এটিও টিকে থাকবে। এটি টিকে থাকবে।"
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, "এই দিনটির জন্য এই অঞ্চলের এবং সারা বিশ্বের মানুষ কাজ করেছে, সংগ্রাম করেছে, আশা করেছে এবং প্রার্থনা করেছে।"
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক' বলে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, "কেউ ভাবেনি যে এটি ঘটতে পারে।"
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, "বছরের পর বছর ভোগান্তি ও রক্তপাতের পর, গাজায় যুদ্ধ শেষ হয়েছে।"
তিনি বলেন, "মানবিক সহায়তা এখন প্রবল বেগে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে শত শত ট্রাক ভর্তি খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য সরবরাহ, যার বেশিরভাগই এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের অর্থায়নে।"
ট্রাম্প এই 'অবিশ্বাস্য সাফল্য' সম্ভব করতে যেসব আরব ও মুসলিম দেশ সহায়তা করেছে, তাদের প্রতিও তার 'অশেষ কৃতজ্ঞতা' জানান।

মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসিও ট্রাম্পসহ কাতার ও তুরস্কের নেতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি গাজার পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের তথাকথিত দুই-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্ত তৈরি করার আশাও ব্যক্ত করেন।
হামাসের কাছে থাকা জীবিত অবশিষ্ট ২০ বন্দিকে মার্কিন-মধ্যস্থতায় করা চুক্তির প্রথম ধাপ অনুযায়ী ফেরত দেওয়ার পর এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। এছাড়াও তারা মৃত বন্দিদের দেহাবশেষযুক্ত চারটি কফিন হস্তান্তর করে। ইসরাইলও ২৫০ ফিলিস্তিনি কয়েদি এবং গাজা থেকে আটক ১,৭০০-এরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দেয়, যাদেরকে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করে রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, "বন্দিদের মুক্তি একটি জাতীয় অর্জন এবং আমাদের সংগ্রামে একটি উজ্জ্বল মাইলফলক।"
এতে বলা হয়, "আমাদের মুক্ত বন্দিরা দুই বছর ধরে তারা যেসব ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তা আধুনিক যুগে নিমর্ম ও ফ্যাসিবাদের চিত্র তুলে ধরে।"
হামাস মানবাধিকার ও মানবিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা ইসরায়েলের 'বন্দিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত অপরাধ' বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।
গত ৮ অক্টোবর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের তার পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে ইসরাইল ও হামাস। মার্কিন তত্ত্বাবধানে তুরস্ক, মিশর ও কাতারের প্রতিনিধিদল নিয়ে শার্মুশ শেইখে উভয় পক্ষের মধ্যে চার দিনের পরোক্ষ আলোচনার পর এই চুক্তি হয়।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গাজায় একটি নতুন শাসন কাঠামো, ফিলিস্তিনি এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি নিরাপত্তা বাহিনী এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে বৈদেশিক অর্থায়নে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০২৩-এর অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় গাজায় ৬৭,৮০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা কার্যত বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৪