প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়া
জুলাই সনদ লঙ্ঘন প্রধান উপদেষ্টার: সালাহউদ্দিন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি: জামায়াত
-
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রধান উপদেষ্টা নিজে স্বাক্ষর করেছেন, সেটা তিনি লঙ্ঘন করেছেন তাঁর ভাষণের মাধ্যমে।
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা আড়াইটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ এ প্রতিক্রিয়া জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি কী হবে, তা জাতিকে জানান। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে ‘নোট অব ডিসেন্টের’ মাধ্যমে মীমাংসিত। এটি নতুন করে আরোপ করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ নামে যে বডি, সেটি জাতীয় সংসদের কোনো পর্যায়ে গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বিষয় ছিল না। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধারণা।
সালাহউদ্দিন আহমদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ওপর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আজ রাতে স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।#
একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি: জামায়াত
'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে খুবই পরিষ্কার করে বলতে চাই, প্রধান উপদেষ্টার একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণায় জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়নি।'
আজ (বৃহস্পতিবার) জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, 'সাংবিধানিক সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কার নিয়ে যে ৪৮টি প্রস্তাবে আমরা সর্বসম্মত হয়েছি, এগুলো জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জাতিকে জানাতে হবে-ভোটাররা জানবেন, তার ওপরে মনস্থির হবে, তারপরে হ্যাঁ-না মতামত দেবেন।'
কিন্তু একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে এই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ভোটারকে আবার একটা প্রতীকেও জাতীয় নির্বাচনের ভোট দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা একটা সংকট তৈরি করবে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে কেয়ারটেকার হোক আর যত নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথাই আমরা বলি, প্রত্যেকটি নির্বাচনে কমবেশি কিছু ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা হয়ে থাকে, বিশৃঙ্খলা হয়ে থাকে। দু-চারটা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেল, গোলাগুলি হলো, স্থগিত হয়ে গেল। একই দিনে ভোট হলে এমন ঘটনা যেকোনো কেন্দ্রে হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের ভোট বন্ধ হলো, কিন্তু গণভোটের দশা কী হবে? এর কোনো জবাব নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি এবং দেশপ্রেমিক সমমনা দল দাবি করে আসছি যে, এই ভোটটা জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে। তাহলে এটার আইনি ভিত্তিটা দৃঢ় হবে, এটা নিয়ে পরবর্তীতে আদালত ও আইনি ভিত্তি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। সেই সংকট কিন্তু রয়েই গেল।'#
পার্সটুডে/জিএআর/১৩