'বাংলাদেশের মানুষ বোঝে ওয়ান, ম্যান ওয়ান ভোট'
মানুষ এখন পর্যন্ত পিআর বুঝতেই পারছে না: ফখরুল
-
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর (ফাইল ফটো)
বাংলাদেশের মানুষ এখন পর্যন্ত পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) বুঝতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, 'দেখবেন, শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না।'
আজ (শনিবার) দুপুরে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মউশিক শিক্ষক কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ এর আয়োজন করে।
দেশে পরিবর্তন হচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন হবে এবং সেটা ফেব্রুয়ারিতেই হবে। এই নির্বাচনের আগে দেখেছেন সংস্কার কমিশন করা হয়েছিল। সংস্কার কমিশনে খুব বড় বড় পণ্ডিতরা এসেছেন, বিদেশ থেকেও এসেছেন। তারা নয় মাস ধরে অনেক সংস্কারের কথা বলেছেন, সব শেষে যেটা বলেছেন, ওটা আমরা বুঝি না ঠিক মতো। দেশের মানুষ অনেকেই বুঝতে পারে না—পিআর। পিয়ার কয়জন বোঝে? পিআরটা কী আসলে? ইংরেজি শব্দ হচ্ছে, প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন। আমার ঠিক মতো বুঝতে কষ্ট হয়। বাংলাতে আরও কঠিন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। এগুলোর সঙ্গে তো আমরা পরিচিত না!
'বাংলাদেশের মানুষ বোঝে ওয়ান, ম্যান ওয়ান ভোট। একজন ব্যক্তি দাঁড়াবে, তার মার্কা থাকবে, তার মার্কা দেখে আমি ভোট দেবো। এটাই আমরা সব সময়, সেই আদিকাল থেকে দেখে আসছি। এখন আপনি এটাকে পরিবর্তন করবেন, তার জন্য আবার গণভোট করবেন, গণভোটে থাকবে আবার হ্যাঁ-না...এখন গণভোটে নাকি চারটা প্রশ্ন থাকবে একটা গণভোটের ব্যালটে। এটা মানুষ এখন পর্যন্ত বুঝতেই পারছে না। কেউ বুঝতে পারছে না, দেখবেন, শেষ দিন পর্যন্ত বুঝতেও পারবে না,' যোগ করেন তিনি।
একটি রাজনৈতিক দল সমানে চিৎকার করছে 'পিয়ার দিতে হবে' উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'পিআর না হলে নির্বাচন হবে না। অনেক হুংকার-টুংকার হয়েছে। এখন আবার সুর নরম হয়ে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের জন্য চতুর্দিকে দৌড়-ঝাঁপ চলছে। এই জিনিসগুলো ঠিক না। মানুষকে যেটা বলবেন, সেটা সঠিকভাবে যাওয়া উচিত। মানুষকে বোকা বানিয়ে, ভুল পথে পরিচালিত করা, আমার মনে হয় না ইসলাম আমাদেরকে কোথাও বলেছে—এটা আমার জানা নাই।'
পূর্ববর্তী বক্তাকে উদ্ধৃত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'একজন বললেন যে, জামায়াতের টিকিট কাটলে জান্নাতের টিকিট কাটা হবে। কোথায় আছে? আমাকে বলুক তারা, দেখিয়ে দিক কোথায় আছে। এটা ঠিক না, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে নেওয়া। কখনোই ইসলাম এই কথা বলে না।'
'সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, এই মহলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাঁড়াতে পারছিল না। আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব তাদেরকে সুযোগ করে দেন রাজনৈতিক অঙ্গনে আসার। আইডিয়া নামে প্রথমে এসেছিল। তারপরে তারা কাজ করেছেন, আমাদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। আমরাও তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গত ১০ বছর কিন্তু আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পরাজিত করার জন্য তাদের দৃশ্যমান কোনো কাজ দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শুনতে পাই, ছাত্রলীগের মধ্যে তারা ঢুকে ছিল। শুনেছি, আমরা জানা নাই। অর্থাৎ ছাত্রলীগ সেজে তারা সেখানে ছিল। এই ধরনের কাজ তো আমরা করতে পারি না! আমরা সরাসরি, সামনা-সামনি লড়াই করেছি। আমাদের ৬০ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২০ হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার ৭০০ মানুষকে, নেতা, আমাদের এমপিসহ গুম করে দেওয়া হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ফখরুল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রকৃত মানুষ হওয়াই ইসলামের শিক্ষা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, 'একজন মানুষ যদি মানুষ হয়, যে অন্যান্য মানুষকে সম্মান করবে, আমার রসূলের যে শিক্ষা—সবাই সব সময় অন্যকে সম্মান করবে, তার যে পাওনা সেটা বুঝিয়ে দেবে, আর বিনয়ী হয়ে থাকবে। এই শিক্ষা আমরা ছোটবেলা থেকে পেয়েছি। যে কারণে পরবর্তীকালে যখন কাজের জীবনে এসেছি, রাজনৈতিক জীবনে এসেছি, সেখান থেকে কিন্তু আমরা বাইরে যেতে পারিনি। আমরা যারা সেই শিক্ষার অন্তত কিছুটা আভাস পেয়েছি, কিছুটা কাছে যেতে পেরেছি, আমরা কিন্তু খুব একটা অন্যায় কাজ করতে পারি না।'
ধর্ম সম্পর্কে ভালো করে জানা এবং সেটা প্রয়োগ সমাজে কীভাবে করা যাবে সেই বিষয়ে আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন বলেও এ সময় মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
ফখরুল আরও বলেন, 'বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল। আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র যদি একটা দেশে থাকে, তাহলে সকল শ্রেণির, সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষের অধিকারটাকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। আর যদি সেটা না থাকে, তাহলে কারও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না।
আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে দেখেছি যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা কী করে প্রতিটি মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে, ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমার ধর্মে পালনের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। আপনাদের সবার মন থাকবে, খুতবা কী হবে তাও কাগজে লিখে পাঠাতো। এই যদি অবস্থা হয়, তারপর আবার দাবি করে যে তারা ইসলামের পক্ষে কাজ করেছে এবং আরও দুঃখ হয়, যখন দেখি আমাদেরই দেশের কিছু আলেম-উলামারা তার সঙ্গে মিটিং করে তাকে কওমি জননী উপাধি দিচ্ছে। এগুলো আমার কাছে প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো উত্তর ঠিকভাবে পাব এটা আমি আশা করি।'
গত ১৫-১৬ বছর একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সব কাজে তার নিজের লোক, দলের বসানোর চেষ্টা করেছে। এ বসানোর চেষ্টা করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তো একটি প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে মর্যাদাশীল-ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে যদি দলীয় লোককে বসানো হয়, যারা বাইরে ইসলামের কথা বলে মুখে কিন্তু ইসলাম বিশ্বাসই করে না, তাহলে তো সেটা সঠিকভাবে চলবে না। কোন দেশে বায়তুল মুকাররমের খতিব (রাজনৈতিক পট) পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে যায়?'#
পার্সটুডে/জিএআর/২২