বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি নয়, ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল: নির্ভয়ার মা
-
আশা দেবী
ভারতের গুজরাটের চাঞ্চল্যকর বিলকিস বানু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষীদের মুক্তি দেওয়ায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন দিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার নির্ভয়ার মা আশা দেবী। তিনি বললেন, তাদের ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল।
২০১৩ সালে নৃশংসভাবে নির্ভয়াকে ধর্ষণের পর ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। সেই নির্ভয়ার মা আশা দেবী মোজো স্টোরি নামে এক নিউজ পোর্টালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গুজরাট সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের কাছে ১১ দোষী ব্যক্তিকে দেওয়া শাস্তি মওকুফের আদেশ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ এবং তার ৩ বছর বয়সী মেয়েসহ পরিবারের ৭ সদস্যকে হত্যার দায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে গত ১৫ আগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আশা দেবী বলেছেন, “আমি মনে করি, ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্তদের কখনোই মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। যদি তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তবে তাদের সারা জীবনের জন্য কারাগারে রাখা উচিত। কারণ, এটি কোনও কেস বা পরিবারের সাথে সম্পর্কিত নয়। এটি সকল নারীর নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত। যদি এই ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়, তবে এটি সমাজে ভুল বার্তা দেবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, গ্রাম ও শহরের লাখ লাখ নারী ধর্ষণের মামলায় ন্যায়বিচার পেতে লড়াই করছেন। তাদের পরিবার এবং মা-বাবা তাদের মহিলাদের বাইরে পাঠাতে ভয় পায়। এ কারণে এসব ধর্ষক ও খুনিদের মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ধর্ষণ ও হত্যার দোষীদের যেভাবে মিষ্টি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে এবং মালা পরানো হয়েছে তা কেবল ভুক্তভোগী বিলকিসের প্রতি উপহাসই নয়, বরং সমস্ত ধর্ষিতাকে উপহাসও করা হয়েছে। তাই আশা দেবী গুজরাট সরকারকে তার আদেশ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

দোষীদের গলায় মালা পরানোকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “এটি একটি বার্তা দেয় যে, যদি কেউ একজন পুরুষ হয়, তবে সে যে জঘন্য অপরাধই করুক না কেন, সে নির্দোষ। যাদের ধর্ষণের মানসিকতা আছে, তারা এই মুক্তি দেওয়ায় ভুল বার্তা দিয়েছেন। স্পষ্ট ভাষায় বলা যায়, তারা ধর্ষকদের সমর্থন করেছেন।”
আশা দেবী জানান, যখন তিনি দোষীদের মুক্তির কথা শোনেন তখন তার খুব খারাপ লাগছিল। বিলকিসের পরিবারকে এই মওকুফের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে বলেছিলেন। কারণ এই মুক্তি সমাজের স্বার্থে নয়।
তিনি আরও বলেন, দোষীদের ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল, কারণ তারা গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছিল।
আরও পড়ুন : ন্যায় বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাস নড়ে গেছে, শান্তিতে বাঁচার অধিকার চাই : বিলকিস বানু
২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী গৃহবধূ বিলকিস বানু। সে সময় তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ধর্ষকেরা বিলকিসের তিন বছর বয়সী কন্যাসহ পরিবারের সাত সদস্যকে খুন করেছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালে ১১ অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১৪ বছর কারাবাসের পর সেই অপরাধীদের সাজা মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। মুক্তির পর ওই ১১ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অফিসে এবং সেখানে তাঁদের রীতিমতো সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই বিরোধীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।