মে ০৫, ২০২৩ ১৪:৫১ Asia/Dhaka
  • মণিপুরে গণপিটুনিতে আশঙ্কাজনক বিজেপি বিধায়ক! পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

ভারতের মণিপুরের সহিংসতাকে কেন্দ্র করে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কর্ণাটক সফর বাতিল করেছেন। 

এদিকে আজ (শুক্রবার) সকালে সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে তারা। সেনা জানিয়েছে, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। চূড়াচাঁদপুরসহ বিভিন্ন উত্তপ্ত এলাকায় ফ্ল্যাগমার্চ চলছে।

সহিংসতা কবলিত এলাকায় ভুংজাগিন ভালতে নামে এক বিজেপি বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী উন্মত্ত জনতার গণপিটুনির শিকার হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তাকে ‘রিমস’-এ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে রাজধানী ইম্ফলের রাজ্য সচিবালয়ে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের সঙ্গে বৈঠক করে বাড়ি ফিরছিলেন ওই বিজেপি বিধায়ক। পথে আক্রান্ত হন তিনি। জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের রুদ্রমূর্তি দেখে পালিয়ে যান তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা। এ সময়ে বিধায়ক এবং তার গাড়ির চালককে ঘিরে ধরে শুরু হয় গণপিটুনি। গুরুতর আহত অবস্থায় বিধায়ক ভালতেকে উদ্ধার করে ইম্ফলের ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (রিমস)-এ ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে তার অবস্থায়  আশঙ্কাজনক।

মণিপুরে সহিংস পরিস্থিতি

রাজ্যটিতে সহিংসতার জেরে ৮ জেলায় কারফিউ কার্যকর রয়েছে। সহিংসতার কারণে এ পর্যন্ত ৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেনা সূত্রে প্রকাশ, এ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী সহিংসতা কবলিত এলাকা থেকে ৯ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ হাজার জনকে চুড়াচাঁদপুরে নিরাপদ বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার লোককে ইম্ফল উপত্যকায় এবং আরও ২ হাজার জনকে তেনুগোপাল জেলার সীমান্ত শহর মোরেতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

৮ জেলায় কারফিউ বহাল আছে

পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা ও অসম রাইফেলসের জওয়ানদের মোতায়েন করার পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, রেলওয়ে ৫ এবং ৬ মে মনিপুরগামী ৪টি ট্রেন বাতিল করেছে। যারা সহিংসতা ছড়াচ্ছে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।     

এদিকে, মণিপুরে সহিংসতা নিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবার অসমে আশ্রয় নিয়েছে। আমি কাছাড় জেলা প্রশাসনকে এই পরিবারগুলোর দেখভাল করার জন্য অনুরোধ করেছি। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সাথে অবিরাম যোগাযোগ রেখেছি এবং অসম সরকার সঙ্কটের এই সময়ে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

অন্যদিকে, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুও সহিংসতার বিষয়ে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সাথে অবিরাম যোগাযোগ রেখেছেন। পেমা খান্ডু এক বার্তায় বলেন, 'অরুণাচল প্রদেশ সরকার তার ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়ে মণিপুর সরকারের সাথে অবিরাম যোগাযোগ রেখেছে। মণিপুর থেকে আমাদের ছাত্রদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য কমিশনার সিএমও-এর তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার দাবির বিরোধিতা করে গত ৩ মে একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মণিপুর আয়োজিত 'উপজাতি সংহতি মার্চ'-এর পরে রাজ্যে উপজাতি ও অ-উপজাতির মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

ওই ইস্যুতে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসে জাতীয় সভাপতি হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, 'মণিপুর জ্বলছে। বিজেপি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং একটি সুন্দর রাজ্যের শান্তি নষ্ট করেছে। যা ঘটেছে তার জন্য বিজেপির ঘৃণা, বিভাজন ও ক্ষমতার লোভের রাজনীতি দায়ী। আমরা সকল পক্ষের জনগণকে সংযম প্রদর্শন এবং শান্তির সুযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।’ এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মণিপুরের পরিস্থিতির দিকে একনাগাড়ে নজর রাখা হচ্ছে।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/জিএআর/৫ 

ট্যাগ