সংসদে তুমুল হট্টগোল
অধীর রঞ্জন চৌধুরীসহ ৩৩ জন বিরোধী এমপিকে সাসপেন্ড
ভারতীয় সংসদে নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরোধীরা হট্টগোল সৃষ্টি করায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীসহ ৩৩ জন বিরোধী দলীয় এমপিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ৩ জনকে বিশেষাধিকার কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্য এমপিদেরকে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি মেয়াদ পর্যন্ত সাসপেন্ড করেছেন সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এনিয়ে চলতি অধিবেশনে এপর্যন্ত সংসদ থেকে সাসপেন্ড হওয়া এমপিদের সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে পৌঁছেছে। গত ১৪ ডিসেম্বর লোকসভা থেকে ১৩ এবং রাজ্যসভা থেকে ১ জন এমপিকে শীতকালীন অধিবেশনের বাকি মেয়াদ পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
নয়া সংসদ ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে বিরোধীরা সংসদে তুমুল হট্টগোল করায় আজ (সোমবার) বেশ কয়েকবার লোকসভার অধিবেশনের কাজকর্ম মুলতুবি হয়ে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়ায় ৩৩ জন বিরোধী এমপিকে সাসপেন্ড করা হয়।
স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমনকি অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সাবেক স্পিকারের মাধ্যমেই তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি হওয়া দুঃখজনক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনেই সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত। হাউসে শ্লোগান দেওয়া, প্ল্যাকার্ড আনা, প্রতিবাদে ওয়েলের কাছে আসা ঠিক নয়। দেশের মানুষও এই আচরণ পছন্দ করে না।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দর্শক আসন থেকে আচমকা ঝাপ দেন দুই যুবক। এরপর তারা একের পর এক বেঞ্চ টপকে স্পিকারের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন এবং স্প্রেয়ারের সাহায্যে তাদের জুতোর মধ্যে থাকা হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দেন। ওই ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা এ ব্যাপারে সংসদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে।
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টিভিতে যে বিবৃতি দিচ্ছেন আমরা চাই তা তিনি সংসদে দিন। এ ছাড়া সংসদের নিরাপত্তার জন্য সরকার আর কী পদক্ষেপ নেবে তা দেশবাসী ও আমাদের জানান।
সাসপেন্ড হওয়া এমপিদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের বাহুবল কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের উপর বুলডোজার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের।
এ প্রসঙ্গে আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘সংসদ ভবনে সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করে চলেছে বিজেপি। সংসদে যে হামলা হয়েছিল, তার পাস সই করেছিলেন, দুষ্কৃতীদের পাস সই করেছিলেন বিজেপির এমপি প্রতাপ সিমহা, তাকে এখনও গ্রেফতার করা হল না, তাকে বহিষ্কার করা হল না। তার বিরুদ্ধে কোনোরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল না। কিন্তু তৃণমূলের একঝাঁক এমপিসহ বিরোধী এমপি যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি বিরোধী ‘I.N.D.I.A’ জোটকে ভূত দেখছে বিজেপি। যে এই দুষ্কৃতীদের ঢোকাল, সেই বিজেপি এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। কিন্তু যারা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাদেরকে সংসদ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এটা কোন দেশের গণতন্ত্র?’ এটা লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।#
পার্সটুডে/এএএইচ/জিএআর/১৮