রাম মন্দিরের শিলান্যাসে মোদীর অযোধ্যা সফর নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ‘মিম’ নেতা
-
ইমতিয়াজ জলিল
ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বহুলালোচিত রাম মন্দিরের শিলান্যাসকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর অযোধ্যা সফর নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মহারাষ্ট্রের মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) নেতা ইমতিয়াজ জলিল এমপি।
আগামী ৫ আগস্ট প্রস্তাবিত রাম মন্দিরের ভূমিপুজো ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারী ও লকডাউনের মধ্যে এ ধরনের কর্মসূচিতে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ‘মিম’ নেতা ইমতিয়াজ জলিল এমপি বলেছেন, ‘আইন সকলের জন্য এক হওয়া উচিত। আমরা মন্দিরের বিরোধিতা করছি না। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী তা হচ্ছে। কিন্তু সরকার উৎসবে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে, এটা কি কেবল সাধারণ মানুষের জন্য, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নয়? পিএমও সামাজিক দূরত্ব পালনের কথা বলছে। তাহলে আমরাও সামাজিক দূরত্ব পালন করব যাতে ঈদের নামাজ পড়া যায়। ইমতিয়াজ জলিল বলেন, উত্তর প্রদেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো খারাপ। যদিও বিজেপি বলেছে প্রায় দু’শো ব্যক্তি ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকার জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, যদি ওই অনুষ্ঠানের জন্য দু’ঘণ্টার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে সাধারণ ভক্তদের মন্দিরে পুজো করা বা মসজিদের নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না কেন? যেখানে কম সময় লাগে। অযোধ্যায় যাওয়া লোকদের মহামারীর সঙ্গে কোনও প্রকার সমঝোতা হয়েছে, না এসময়ে ভাইরাস ছুটিতে চলে যাবে?’
‘মিম’ নেতা ইমতিয়াজ জলিল এমপি আরও বলেন, কিছু বিজেপি নেতা বলছেন যে আমরা ৪৯২ বছর ধরে এই মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তারা কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে পারলে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে পারতেন। তিনি ঈদুল আজহায় ‘প্রতীকী কুরবানি’ দেওয়ার জন্য মুসলিমদের পরামর্শ দেওয়ায় মহারাষ্ট্র জোট সরকারেরও সমালোচনা করেছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৫ আগস্ট উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় প্রস্তাবিত বিশাল রাম মন্দির নির্মাণের শিলান্যাস করবেন। শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের কোষাধ্যক্ষ স্বামী গোবিন্দ দেব গিরি বলেন, ‘দেড় শতাধিক আমন্ত্রিতসহ দু’শো জনের বেশি মানুষ ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের আগে রামলালা দর্শন করবেন। এর পাশাপাশি তিনি অযোধ্যার হনুমান গড়ি মন্দিরে হনুমানজীর উপাসনা করবেন।’ ভিত্তি প্রস্তর অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন রাজ্যের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও স্বামী গোবিন্দ দেব গিরি জানান। অযোধ্যার রাম জন্মভূমি স্থলে তিন দিবসীয় বৈদিক অনুষ্ঠানের জন্য এরইমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ওই অনুষ্ঠান ৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ৫ আগস্ট ভূমিপুজোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
ভারতে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের প্ররোচনায় উত্তর প্রদেশের অযোধ্যার কয়েক শ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ‘করসেবক’ নামধারী উগ্র ধর্মান্ধরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তাঁদের দাবি, ওই জায়গাটি ভগবান রামের জন্মস্থান। দীর্ঘকাল ধরে আদালতে মামলা চলার পরে গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট একটি ট্রাস্ট গঠন করতে বলে এবং ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে বিতর্কিত ওই জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেয়। ওই ইস্যুতে মুসলিমদের দাবি আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপরই বহুলালোচিত রাম মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত হয়। সুপ্রিম কোর্ট অন্যত্র মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি দেওয়ার কথা বললেও সেই বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি হয় নি। মুসলিমরাও অন্যত্র মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে আগ্রহ দেখায়নি।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এনএম/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।