গরু জবাই বন্ধে কঠোর আইন তৈরির পথে অসম, ‘বৈষম্যমূলক’ বললেন আমিনুল
-
গরুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছে একজন নারী
ভারতের বিজেপিশাসিত অসমে গরু জবাই বন্ধে কঠোর আইন তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। গতকাল (সোমবার) বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ‘দ্য অসম ক্যাটল প্রিজারভেশন বিল, ২০২১’ পেশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধীদল এআইইউডিএফ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘অসমে গরুকে সেবা করার কথা বলা হচ্ছে। অসমে গরু সম্মানের কিন্তু ‘গোয়া’, ‘নাগাল্যান্ড’, ‘মেঘালয়’-এ গরুকে কেন একই মর্যাদা দেওয়া হয় না? এটা কী ধরণের মানসিকতা। আসলে ওই বিলের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত হানাই বিজেপি সরকারের উদ্দেশ্য। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে গরু জবাই করা যাবে না। অর্থাৎ মুসলিমদের কুরবানি বন্ধ করতে চায় ওঁরা। অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পশু জবাই বৈধ, কিন্তু ধর্মীয় কারণেও গরু জবাই নয়, এই বিধানটাই বৈষম্যমূলক।’

গণমাধ্যমে প্রকাশ, অসম গো-সুরক্ষা বিল ২০২১-এর ৪ নম্বর ধারায় গবাদি পশু জবাই বন্ধের কথা বলা হয়েছে। ৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গবাদি পশু হত্যা করা যাবে না। ৬ নম্বর ধারায় কসাইখানা ছাড়া অন্যত্র গবাদি পশু জবাই করা যাবে না। ৭ নম্বর ধারায় গরু সরবরাহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়মের কথা বলা হয়েছে। ওই বিলের ১৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ধারায় উল্লেখিত বিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এরফলে তিন বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানাসহ আট বছর অবধি হতে পারে। জরিমানার অঙ্ক হবে ৩/৫ লাখ টাকা। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে কোনও ব্যক্তি একই অপরাধ করলে শাস্তির মাত্রা হবে দ্বিগুণ। এ এছাড়া হিন্দু, জৈন, শিখ অথবা গরুর গোশত খায় না এমন এমন সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় গরুর গোশত বা গরুর গোশতের কোনও পণ্য বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে না। মন্দির-সত্র বা হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে গরু জবাই বন্ধের কথা বলা হয়েছে। ধর্মীয় উৎসবেও বাছুর, গাভী, গরু জবাই বন্ধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শহীদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল ড. মুহাম্মাদ আফসার আলী আজ (মঙ্গলবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘গরু জবাই, গরুর মাংস ভারতবর্ষের রাজনীতিতে বহু পুরনো, এটা আজকের নয়। মুঘল আমলেও অনেক সম্রাটের আমলে গরু জবাই নিষিদ্ধ ছিল। এই বিষয়টা মুসলিমদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেখা ঠিক নয়। এবং অমুসলিমরা সাধারণত ইসলামিক জ্ঞান নেই বলে তারা এটাকে সম্পৃক্ত করে দেখেন অনেক সময়ে। কিন্তু অমুসলিমদের মধ্যে একটা অংশ যারা ‘হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি’ করেন তারা এটাকে ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ হিসেবে সামনে আনেন। তাদের উদ্দেশ্য হল, গোহত্যা বিষয়টা সামনে আসলেই মুসলিমরা ক্ষেপে যাবে। এবং হিন্দুরা তাদেরকে হিন্দু ধর্মের রক্ষাকর্তা মনে করবে। এ অবস্থায় তাহলে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি বা হিন্দু ভোটের উপরে ভিত্তি করে যে রাজনীতি তা ফলপ্রসূ হবে। তারা এই বিভাজনের রাজনীতিতে সফল হয়েছেন আগে। মুসলিমদের মধ্যে একটা অংশ যারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই তারাও অনেক সময়ে এখানে বিভ্রান্ত হন।’

ড. মুহাম্মাদ আফসার আলী আরও বলেন, ‘আসলে গরু একটা প্রাণী। আর গরুর মাংস হিন্দুরাও খেয়েছেন আগে। তাদের ধর্মীয় শাস্ত্রে বিধানে আছে। বেদে আছে, মনুসংহিতায় আছে যে, গরুর মাংস ব্রাহ্মণরা খেতেন। কিন্তু তারা রাজনৈতিক কারণে, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মে যখন মানুষ বড়ো বড়ো সংখ্যায় দীক্ষিত হচ্ছিলেন হিন্দু ধর্ম ছেড়ে, এই জৈন ও বৌদ্ধদের আপাতত অহিংস নীতিটাকে কাজে লাগানোর জন্য এবং হিন্দু ধর্ম থেকে যাতে চলে না যায় সব সে জন্য ব্রাহ্মণরা, উচ্চবর্ণের হিন্দুরা একসঙ্গে গরুর মাংস খওয়া বন্ধ করে দেন। এটা রাজনৈতিক কারণ। ধর্মীয় শাস্ত্রে তাদের এখনও গরুর মাংস খাওয়ার বিধান আছে। কিন্তু তারা বাস্তবে ও মুখে বলেন যে আমরা খাই না। মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বার্তা হচ্ছে যে, বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি বা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যারা করে তারা মুসলিমদের খেপানো যায় এমন ইস্যুগুলো সামনে আনে। সেজন্য ওদের ফাঁদে পা দিলে চলবে না।’
ইসলামের সঙ্গে গরুর গোশতের অপরিহার্য সম্পৃক্ততা নেই বলেও ড. মুহাম্মাদ আফসার আলী মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক ও অসম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত সইকিয়া বলেন, বিলটিতে অনেক সমস্যা আছে। সেজন্য আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন তাঁরা। দেবব্রত সইকিয়া বলেন, ‘৫ কিলোমিটারের মধ্যে গরুর গোশত নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ওই ৫ কিলোমিটার কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে? যেখানে ইচ্ছে পাথর ফেলে মন্দির বানিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ। গোটা বিষয়টাই সন্দেহজনক। এরফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়বে ছাড়া কমবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মেঘালয়ের বিজেপি নেতা বার্নাড মারাক বলেছিলেন ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে সুলভে গরুর গোশত সরবরাহ করা হবে। একইসঙ্গে তিনি রাজ্যের কসাইখানাগুলোকে আইনি বৈধতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/ ১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।