উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি মানবাধিকারের পরিপন্থী: দেওবন্দ
https://parstoday.ir/bn/news/india-i94580-উত্তর_প্রদেশে_জনসংখ্যা_নিয়ন্ত্রণ_নীতি_মানবাধিকারের_পরিপন্থী_দেওবন্দ
ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশ সরকারের নয়া জনসংখ্যা নীতিকে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবুল কাসিম নোমানী মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যাদের দুইয়ের বেশি সন্তান হবে তাদেরকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা সেই শিশুদের প্রতি অন্যায়।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
জুলাই ১৪, ২০২১ ১৮:৩৪ Asia/Dhaka
  • উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি মানবাধিকারের পরিপন্থী: দেওবন্দ

ভারতের বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশ সরকারের নয়া জনসংখ্যা নীতিকে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবুল কাসিম নোমানী মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যাদের দুইয়ের বেশি সন্তান হবে তাদেরকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা সেই শিশুদের প্রতি অন্যায়।

গত (শুক্রবার) উত্তর প্রদেশে রাজ্য আইন কমিশনের খসড়া বিলে সুপারিশ করা হয়েছে দু'য়ের বেশি যাদের সন্তান রয়েছে তাদেরকে সরকারী চাকুরী এবং সরকারী প্রকল্পগুলোর সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। এ ছাড়া যারা দুই সন্তান নীতি অনুসরণ করেন না তাদের ভাতা থেকে বঞ্চিত করার বিধান রয়েছে। খসড়া বিলে দুই সন্তান নীতি লঙ্ঘনকারীদের স্থানীয় নির্বাচন এবং সরকারী চাকরীর আবেদন করা থেকে বিরত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারী কর্মচারীদের পদোন্নতি বন্ধ এবং তাদের ৭৭ প্রকারের সরকারী প্রকল্প ও অনুদান থেকে বঞ্চিত করারও বিধান রয়েছে খসড়া বিলে। এরপরেই ওই বিল সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।  

আজ (বুধবার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘জনসত্তা ডট কম’ জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশে ৮ জন বিধায়ক আছেন যাদের  ছয়টি করে  সন্তান রয়েছে। উত্তর প্রদেশ বিধানসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে বর্তমানে ৩৯৭ জন  বিধায়কদের ডেটা ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৩০৪ জন  বিজেপি বিধায়ক। আশ্চর্যের বিষয় হ'ল এরমধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ  ১৫২ জন  বিধায়কের তিন বা  তাঁর চেয়ে বেশি সন্তান রয়েছে। শুধু  তাই নয়, এক বিধায়কের ৮ টি পর্যন্ত সন্তান  রয়েছে। এ ছাড়া একজন বিধায়কের সাতটি সন্তানও রয়েছে। শুধু এটিই নয়, বিধানসভায় আটজন বিধায়ক রয়েছেন যাদের  প্রত্যেকের ছয়টি করে সন্তান রয়েছে।  বর্তমান বিধানসভায় ১৫ জন এমন বিধায়ক রয়েছেন যাদের  প্রত্যেকের পাঁচটি করে সন্তান রয়েছে। এ ছাড়াও ৪৪ জন বিধায়কের প্রত্যেকের চারটি করে এবং ৮৩ জন বিধায়কের তিনটি করে সন্তান রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে আজ (বুধবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল ড.  শেখ কামাল উদ্দীন রেডিও তেহরানকে বলেন, কথায় আছে  আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখায়। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশের বিজেপিশাসিত রাজ্যে দুই সন্তান নীতি কার্যকর করতে আইন প্রণয়ন করার কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু যারা এই নীতি আনার কথা ভাবছেন তাদের নিজেদের বেশিরভাগেরই দুয়ের বেশি সন্তান রয়েছে।  এমনকি কোনও কোনও বিধায়কের ছয়টি পর্যন্ত সন্তান রয়েছে বলে খবর। মন্ত্রীদেরও একাধিক সন্তান রয়েছে। এইসব ক্ষেত্রে কী চ্যারিটি বিগিনস্ অ্যাট  হোম এই যে আপ্তবাক্য, সেটিকে অনুসরণ করা হবে অর্থাৎ তারা মন্ত্রিত্ব বা বিধায়ক পদে ইস্তফা দেবেন?  দ্বিতীয়তঃ সারা পৃথিবীতে এমন বহুসন্তান রয়েছেন যারা তাদের পিতা-মাতার তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বা তারও বেশি সংখ্যার সন্তান এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সেই সন্তানেরা বহু উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। তাদেরকে আমরা কথায় কথায় স্মরণ করি। কখনো বলি না যে তারা তাদের পিতা-মাতার কততম সন্তান। এ ক্ষেত্রে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদাহরণ আমরা আনতে পারি।

হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল ড.  শেখ কামাল উদ্দীন

তৃতীয়তঃ যে সন্তানটি পৃথিবীতে আসতে পারতো তার না আসার পিছনে কী কোনও পিতা-মাতার  অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে না তো! তাই যদি হয় তাহলে সেটি একটি বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে বলে মনে করি। আর কে না জানে, মানবসম্পদ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যদি প্রত্যেক মানুষের দুহাতে কাজ দেওয়া যায় তাহলে তারা দেশের পক্ষে নিশ্চিতভাবেই ভালো, বড়, সফল উল্লেখযোগ্য উৎপাদন করতে পারতেন। চতুর্থত, আমরা দেখেছি যখনই বড় কোনো নির্বাচন আসে তখনই এই বিজেপি সরকার তাদের অপদার্থতার দিক থেকে দৃষ্টিভঙ্গি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সারাদেশে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, করোনার টিকা সবার কাছে এখনো পৌঁছে দিতে না পারা, কৃষকদের আন্দোলনের সমাধান করতে না পারা, গঙ্গায় একের পর এক লাশ ভেসে যাওয়া, বিভিন্ন শরিকদল বিজেপি সঙ্গ ত্যাগ করছে,  এই অবস্থায় সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন ২০০ আসন পাওয়ার যে স্বপ্ন বিজেপি তাদের কর্মীদের  দেখিয়েছিল তাতে তাদের তর্জন-গর্জন ব্যর্থ হয়েছে।’

‘আগামী বছরেই ভারতের সবথেকে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশে বিধানসভা  নির্বাচন। সেখানে খুন, সাংবাদিক হত্যা, দলিত রমণীর হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে দিতে এ ধরণের একটি সিদ্ধান্ত তারা নিতে চলেছে’ বলেও মন্তব্য করেন হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল ড.  শেখ কামাল উদ্দীন।     

 

উত্তর প্রদেশ সরকার জনসংখ্যা  নিয়ন্ত্রণ নীতি কার্যকর করলে,  এ সকল বিধায়করা সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এবং  ভবিষ্যতে তাদের  নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হল, লোকসভায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৯  পেশ করা নেতাদের মধ্যে একজন হলেন গোরক্ষপুরের সংসদ সদস্য এবং ভোজপুরি চলচ্চিত্র অভিনেতা রবি কিশান, যিনি নিজেই চার সন্তানের বাবা। তবে সংসদে তার বিলটি পাশ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, নথি অনুসারে ১৯৭০  সাল থেকে সংসদ কোনও বেসরকারী সদস্য বিল পাস করেনি।

উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যা নীতির খসড়া প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তীব্র বিতর্কের মধ্যে এবার দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সন্তান সংখ্যা প্রকাশ্যে এসেছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী  বিএস ইয়েদুরাপ্পার পাঁচটি সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।  ছত্তিশগড়ের  মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের ৪ সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে।  গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানী ৩ সন্তানের বাবা। 

 দুই সন্তান ওয়ালা মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যা অবশ্য বেশি। এরমধ্যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, পাঞ্জাবের অমরিন্দর সিং থেকে অসমের হিমন্তবিশ্ব শর্মা এবং দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

দেশের ৪ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কোনও সন্তান নেই। আসলে এই চার মুখ্যমন্ত্রী কখনও বিয়ে করেননি। এরমধ্যে উত্তর প্রদেশের  যোগী আদিত্যনাথ, পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উড়িষ্যার নবীন পটনায়েক এবং হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টার রয়েছেন। #     

পার্সটুডে/এমএএইচ/বাবুল আখতার/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।