ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশের পর দু'টি ক্যামেরা বন্ধ তেহরানের প্রতিক্রিয়ার সূচনা মাত্র
চীন ও রাশিয়ার কঠোর বিরোধিতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র নির্বাহী বোর্ডের ত্রৈমাসিক বৈঠকে আমেরিকা ও তিন ইউরোপীয় দেশের ইরানবিরোধী প্রস্তাবটি পাস হয়েছে। গতকাল (বুধবার) রাতে ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট আইএইএ'র নির্বাহী বোর্ডের সভায় অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ৩০টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে চীন ও রাশিয়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে এবং ভারত, পাকিস্তান ও লিবিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।
আইএইএর নির্বাহী বোর্ডে ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশের পর ভিয়েনায় নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ এক প্রতিক্রিয়ায় সংস্থাটির এ পদক্ষেপ তেহরান ও আইএইএর মধ্যে সহযোগিতা বিস্তারে কোনো ভূমিকা রাখবে না উল্লেখ করে বলেছেন, এ ভাবে ভিয়েনা সংলাপকেও এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে ভিয়েনায় নিযুক্ত চীনের প্রতিনিধি ওয়াং চাঙগ ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশের তীব্র বিরোধিতা করে ইরানের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টির জন্য পাশ্চাত্যের প্রচেষ্টার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সংকট সৃষ্টির মূল হোতা আমেরিকার উচিত যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসা এবং পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ইরানের উদ্বেগ দূর করা।
আইএইএর নির্বাহী বোর্ডে পাশ হওয়া প্রস্তাবে ভুয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরানের তিনটি ‘অঘোষিত স্থানে' কথিত ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং আইএইএ'কে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য তেহরানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া, প্রস্তাবটিতে যতদিন পর্যন্ত এ বিষয়ের সুরাহা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেয়া অব্যাহত রাখার জন্য আইএইএর প্রধানের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আমেরিকা ও ইউরোপের তিনটি দেশের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব পাশের ঘটনা থেকে বোঝা যায় তাদের ধারণা আইএইএর ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশের অজুহাতে দেশটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কিংবা অতীতের সব নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে তেহরানকে পাশ্চাত্যের অন্যায় ও অযৌক্তিক দাবির কাছে নতি শিকারে বাধ্য করা যাবে।
ইরান মনে করে আইএইএর এ পদক্ষেপ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং এ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সম্প্রতি ইসরাইল সফরকালে ইসরাইলের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তিনি ইরান বিরোধী প্রস্তাব তৈরি করেন। সে কারণে ইরানও এ ব্যাপারে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ভোটাভুটির আগেই ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আইএইএর ওই পদক্ষেপকে বেআইনি অভিহিত করে দুটি ভিডিও ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, এই সংস্থাটি এ যাবতকালে ইরানের সহযোগিতার কোনো প্রশংসা তো করেনি বরং তারা পাওনাদারের মতো আচরণ করছে।
ইরান বিরোধী প্রস্তাব পাশের পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, অনেক তড়িঘড়ি করে ইসরাইলের প্ররোচনায় এ ধরনের মিথ্যা প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এর ফলে আইএইএর সাথে ইরানের সহযোগিতা ও সংলাপ প্রক্রিয়া দুর্বল হয় পড়বে।
যাইহোক ইরানের শক্ত অবস্থা থেকে বোঝা যায় পাশ্চাত্যের অযৌক্তিক দাবির কাছে তারা মাতা নত তো করবে না বরং এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। প্রস্তাব পাশের প্রতিবাদে যে দুটি ক্যামেরা এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তা শবেমাত্র ইরানের পক্ষে থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার সূচনা মাত্র। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, পাশ্চাত্যের এটা জেনে রাখা উচিত ইরান পরমাণু বোমা তৈরিতে বিশ্বাসী নয় এবং এ বোমা তৈরির কোনো চেষ্টা তারা করছে না।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।