ইরানের অতি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র-শক্তি পশ্চিমা সমরনায়কদের জন্য মহা-আতঙ্ক!
কেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে বিরতিহীনভাবে শক্তি বাড়াতে বললেন সর্বোচ্চ নেতা?
ইসলামী ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে বিরতিহীনভাবে উন্নয়ন ও শক্তিবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বলেছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।
তিনি গতকাল (রোববার) সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ও উন্নতিকে যেন কখনোই যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত মনে না করে।
বর্তমান যুগে কেউ কেউ মনে করে সামরিক শক্তি নয় বরং অর্থনৈতিক শক্তিই একটি দেশের শক্তিমত্তার মূল উৎস। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন বর্তমান যুগেও সামরিক শক্তিই হল একটি দেশের শক্তিমত্তার প্রধান দিক। পশ্চিম এশিয়ার দিকে দৃষ্টি দিলেও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপুল অর্থ সম্পদের অধিকারী হয়েও এ অঞ্চলের অনেক দেশ সামরিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী না হওয়ায় দেশগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি অশান্ত ও সংঘাতময় হওয়ার কারণ ছাড়াও অন্য কয়েকটি কারণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সামরিক ক্ষমতাকে সব সময় জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
প্রথমত পশ্চিম এশিয়ায় সব সময়ই মোড়লিপনা ও হস্তক্ষেপ বজায় রাখার স্বার্থে পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে হুমকি অব্যাহত রেখেছে। এ অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ উপস্থিতির পাশাপাশি পশ্চিমা মদদপুষ্ট কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতাও ইরানের জন্য অব্যাহত হুমকি হয়ে আছে। তাই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তার বাহিনীর কমান্ডারদের বলেছেন, ইরানের প্রতি হুমকি কখনোই শেষ হবে না, কখনোই পুরোপুরি এর অবসান ঘটবে না বলে সশস্ত্র বাহিনীকে যত বেশি সম্ভব নানা ক্ষেত্রে প্রস্তুতি বাড়াতে হবে।
দ্বিতীয়ত ইরানের উচ্চতর সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতির কারণেই আট বছরের পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের পর ইসলামী এই দেশটির শত্রুরা বিশেষ করে পশ্চিমা শত্রুরা ইরানের ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিলেও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সাহস পায়নি যদিও কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চেয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বলদর্পি ও দাম্ভিক মার্কিন সরকার। যেমন, ইরান ২০১৮ সনে মার্কিন গ্লোবাল হক নামের অত্যাধুনিক ড্রোন ধ্বংস করায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধে নামতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন। এর কারণ ইরানের অতি উন্নত পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মার্কিন ও পশ্চিমা সমরনায়কদের জন্য মহা-আতঙ্ক হয়ে আছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বেশ কয়েক বছর আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, শত্রুরা যদি ইরানে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান এর জবাবে দশটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবে!

ইরানের কাছে রয়েছে খুব নিখুঁত মাত্রার বিপুল সংখ্যক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ও দেশটি এখন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রেরও অধিকারী। ইরানের রাডার ও ড্রোন প্রযুক্তিও বিশ্বে শ্রেষ্ঠ পর্যায়ের।
একই কারণে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও যুদ্ধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছে না পশ্চিমা শক্তিগুলো।
তৃতীয়ত মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তিগুলো যে কোনো সময় আলকায়দা, দায়েশ বা আইএস-এর মত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম দিয়ে ইসলামী ইরানের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহার করতে পারে। চতুর্থত ইরানের সামরিক শক্তি খুব উন্নত মানের হওয়ায় তা দেশটির ভেতরে বিদেশী মদদপুষ্ট দাঙ্গাবাজদের মোকাবেলার পাশাপাশি সীমান্তের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে দমন করার মাধ্যম হিসেবে কৌশলগত নিরাপত্তার অংশ হয়ে পড়েছে। ফলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে সামরিক শক্তির বিরতিহীন উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই স্বাধীনচেতা ইসলামী এই দেশটির জন্য। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।