'হত্যাকারীরা বালুচ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না'
জাহেদানে সন্ত্রাসী হামলা: জনগণের দৃঢ় প্রত্যয় ও সুন্নি আলেমদের কঠোর বার্তা
-
জাহেদানে সন্ত্রাসী হামলা
পার্সটুডে– ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সুন্নি আলেমরা। তারা বলেছেন, বালুচ জনগণ কিংবা সুন্নি মুসলিম সমাজের সঙ্গে বিদেশি মদদপুষ্ট এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই।
সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি আলি মুহেদ্দি রাদ জানিয়েছেন, গতকাল (শনিবার) সকালে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী জাহেদানের আদালত ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতার কারণে তারা ব্যর্থ হয়। এরপর সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়ে ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলা শুরু করে।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, আইআরজিসি'র কুদস ঘাঁটি থেকে জানানো হয়েছে, এই হামলায় ৬ জন শহীদ (যার মধ্যে একজন নারী ও এক বছরের কম বয়সী একটি শিশু রয়েছে) এবং ২২ জন আহত হয়েছেন।
জনগণের সতর্কতাই সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ব্যর্থ করেছে
ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, "ইরান সবসময়ই সন্ত্রাসবাদের শিকার। দুঃখের বিষয়, যারা মানবাধিকারের দাবিদার, তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার মুখে নীরব থাকে।"
তিনি আরও বলেন, "ইরানের শত্রুদের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত এই অপরাধী সন্ত্রাসীরা আবারও দেশে অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইরানের সচেতন জনগণ, আগের মতোই, তাদের লক্ষ্য ব্যর্থ করে দিয়েছে।"
জাহেদানের জনগণের ঐক্য ও শত্রুর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার আহ্বান
জাহেদানের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সুন্নি আলেমরা এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করে শাহাদাতপ্রাপ্ত ও আহতদের পরিবারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তারা জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার ও শত্রুর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আলেম, সমাজকর্মী, যুবক ও শিক্ষার্থীরাও সমবেদনা জানিয়ে সন্ত্রাস ও ঘৃণার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বেলুচ জনগণের কণ্ঠস্বর নয়
খাশ শহরের জুমার নামাযের সুন্নি ইমাম বলেছেন, "এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বেলুচিস্তানের জনগণ বা সুন্নি-বেলুচ সমাজের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কাজ কেবল ইরানের জনগণের বিদেশি শত্রুদের স্বার্থে।"
সিস্তান ও বেলুচিস্তানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোস্তফা মোহেমি বলেছেন, "সন্ত্রাসীদের হতাশাজনক কর্মকাণ্ড জনগণ ও বুদ্ধিজীবীদের সচেতনতার কারণে ব্যর্থ হবে এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই তাদের স্থান হবে।"
মাওলানা আবদুল হামিদের হামলার নিন্দা
জাহেদানের মাক্কি মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল হামিদ ইসমাইল জাহি বলেছেন, “একটি বেসামরিক স্থানে নারীদের ও শিশুদের হত্যা কোনোভাবেই বৈধ নয়। এটি সম্পূর্ণ অমানবিক ও অনৈসলামিক।” তিনি বলেন, “সশস্ত্র সহিংসতা কখনোই সিস্তান ও বেলুচিস্তানের জনগণের উপকারে আসে না, বরং এটি তাদের ক্ষতিই করে।”
ইসলামে সন্ত্রাস ও সহিংসতার কোনো স্থান নেই
জাহেদানের আল-আকসা মসজিদের ইমাম মাওলানা বিলাল হাক্কানি মানেশ নারুয়ি বলেন, “এই হামলা সম্পূর্ণ অন্ধ, মরিয়া ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। সন্ত্রাস, হুমকি, সহিংসতা কখনো ইসলাম অনুমোদন করে না।”
এই হামলা ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী হত্যাকাণ্ডেরই প্রতিচ্ছবি
সুন্নি আলেম মাওলানা আবদুল বাসেত হাসান জাহি বলেন, "এই হামলা গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতারই প্রতিচ্ছবি। যেখানে নিরস্ত্র, বিশ্বাসী নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। আজকের বিশ্বে কোনো সহিংসতা ব্যক্তিগত নয়; এর পেছনে নিশ্চয়ই বিশ্বব্যবস্থার কোনো প্রভাবশালী শক্তির হাত থাকে।”
শত্রুরা জাতীয় ঐক্য ভাঙতে চায়
খাশের গভর্নর ফারশাদ গোর্গিচ বলেছেন, “রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলো বিভ্রান্ত ও প্রলুব্ধ কিছু ব্যক্তিকে দিয়ে প্রাদেশিক স্থিতি বিনষ্ট করতে চায়। তবে প্রাদেশিক জনগণ সজাগ এবং তারা কখনো নিরীহ রক্তকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার হতে দেবে না।”
পার্সটুডে/এমএআর/২৭