ইরান কি পর্যটনের জন্য নিরাপদ দেশ? + ছবি
-
ইরানে এক ইউরোপীয় পর্যটক দম্পতি
পার্সটুডে : প্রাচীন ইতিহাস, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর দেশ ইরান প্রতি বছর বহু বিদেশি পর্যটককে স্বাগত জানায়। এশিয়ার এই দেশটি তার মোহনীয় দৃশ্যাবলী, প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্য এবং উষ্ণ আতিথেয়তার জন্য পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কৌতূহলী পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
তবে পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু ছবি ও প্রতিবেদন দেখে অনেকেই ইরান ভ্রমণের আগে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু বাস্তবতা প্রায়ই প্রচারিত ধারণার চেয়ে ভিন্ন। যারা ইরানে ভ্রমণ করেছেন, তারা নিরাপত্তা, উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং মানুষের দারুণ ব্যবহারে চমকে গেছেন বলে জানিয়েছেন।
ইরান কি সত্যিই নিরাপদ পর্যটন গন্তব্য?
যদিও অন্যান্য দেশের মতো ইরানেও নিরাপত্তাজনিত কিছু বিষয় রয়েছে, তবুও বেশিরভাগ পর্যটকই ইরানকে নিরাপদ এবং অতিথিপরায়ণ একটি দেশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান বিশ্বের শীর্ষ ২০টি পর্যটন গন্তব্যের তালিকায় রয়েছে।

পশ্চিমা মিডিয়ার প্রচারণা কি মিথ্যা?
যদি কেউ ইরানকে বিপজ্জনক দেশ বলে মনে করে, তাহলে এর প্রধান কারণ হচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট এবং নেতিবাচক প্রচারণা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মার্কিন এবং ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ইরানের সম্পর্কে একটি বিকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করে আসছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, ব্যক্তি স্বাধীনতা বিশেষ করে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ, দারিদ্র্য ও দুর্দশার ছবি দেখিয়ে একটি নেতিবাচক চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য ইরানকে একটি নিপীড়কবিরোধী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করা, বিশেষ করে যখন ইরান নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে সোচ্চার।

অন্যান্য পর্যটন গন্তব্যের তুলনায় ইরান কতটা নিরাপদ?
বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও ইরান, অনেক পশ্চিমা ও আঞ্চলিক দেশের তুলনায় বেশি নিরাপদ। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে একটি নিরাপদ ও উন্মুক্ত পরিবেশ। বিশ্ব নিরাপত্তা সূচকে ইরান তুলনামূলকভাবে কম অপরাধের দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ইউরোপের প্যারিস, লন্ডন, বার্সেলোনা প্রভৃতি জনপ্রিয় শহরে চুরি, প্রতারণা এবং সহিংস অপরাধের হার বেশি। বিপরীতে, ইরানের রাস্তায় রাতেও হাঁটতে গিয়ে পর্যটকরা বেশি নিরাপদ অনুভব করেন। কেউ কেউ ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের অংশ মনে করে আতঙ্কিত হয়, অথচ বাস্তবে ইরান পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম স্থিতিশীল দেশ। মিশর, তুরস্ক ও আমিরাতের মতো দেশে পর্যটন শিল্প বিস্তৃত হলেও কিছু এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা, গণআন্দোলন কিংবা অপরাধের হার অনেক বেশি। ইরানে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী যে, এটি অঞ্চলটির অন্যতম নিরাপদ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইরানে বিদেশি পর্যটকদের গ্রেফতারের ঝুঁকি কতটা?
পশ্চিমা প্রচারণায় অনেকেই ইরানে গ্রেফতার হওয়ার ভয় পান। কোনো বিদেশি যদি অবৈধ অস্ত্র বহনের মতো গুরুতর অপরাধ না করে, তাহলে তার গ্রেফতারের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। সাধারণ পর্যটন কার্যক্রমে জড়িত থাকলে নিরাপদেই ভ্রমণ করা যায়।

ইরানিরা পর্যটকদের সাথে কেমন আচরণ করে?
অনেক পর্যটকের মতে, ইরানে ভ্রমণ ছিল যেন এক নতুন বিস্ময়ের জগতে প্রবেশ। এখানকার মানুষের বিশ্বাস—“অতিথি, আল্লাহর প্রিয়জন”। আর এই বিশ্বাস থেকে তারা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে বিদেশিদের স্বাগত জানায়। ইরানিরা ভ্রমণকারীদের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসে, তাদের সাহায্য করে, ভালো রেস্টুরেন্টের পরামর্শ দেয় এবং অতিথিপরায়ণতার একটি মিষ্টি অভিজ্ঞতা উপহার দেয়। এই আন্তরিকতা অনেক পর্যটকের মন জয় করে নিয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।