চিন্তা ও দর্শন
ইমাম খোমেনির চিন্তাভাবনা: স্বাধীনতা হলো বিদেশীদের অনুসরণ না করা
-
ইমাম খোমেনির চিন্তাভাবনা: স্বাধীনতা হলো বিদেশীদের অনুসরণ না করা
পার্স টুডে - ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মহান প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) মনে করতে স্বাধীনতার অর্থ অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়া, বিদেশীদের নির্দেশ অমান্য করা, বিদেশী হস্তক্ষেপ ও প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা এবং নিজের ভাগ্য ও ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয়া।
এই প্রবন্ধে সমাজে স্বাধীনতা সম্পর্কে ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর অবস্থানের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
স্বাধীনতা
ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর মতে, একটি সমাজের অগ্রগতি ও সভ্যতার প্রথম প্রতীক হলো তার স্বাধীনতা, যা একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং জীবনের মূল্য; তিনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নিহত হওয়াকে তার সর্বোচ্চ সম্মান বলে মনে করতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম এবং সংবিধানও সমাজের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়।
স্বাধীনতা হলো বিদেশী হস্তক্ষেপ ও প্রভাব অস্বীকার
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মহান প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতাকে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হওয়া, বিদেশীদের নির্দেশ অমান্য করা, বিদেশী হস্তক্ষেপ ও প্রভাবকে অস্বীকার করা, নিজের ভাগ্য ও ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনা করা এই অর্থে ব্যবহার করতেন। সাধারণভাবে, তিনি স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি ব্যাপক ধারণা বলে মনে করতেন, যা কেবলমাত্র তখনই সম্ভব হত যদি নির্ভরতার রেখাগুলি তার সমস্ত দিক থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করা হত।
ইরানের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ইমাম খোমেনী (রহ.) এর বিশেষ উদ্বেগ ছিল
ইমাম খোমেনী (রহ.), যিনি ইরানের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তিনি ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর স্বাধীনতা অর্জনের উপর জাতীয় শক্তি বৃদ্ধির প্রভাবকে উপেক্ষা করেননি। তিনি নির্ভরতা থেকে মুক্তির জাতীয় সংকল্প, সশস্ত্র বাহিনী, জনগণ ও কর্মকর্তাদের ঐক্য এবং সর্বক্ষেত্রে "পূর্বও নয়, পশ্চিমও নয়"-শীর্ষক নীতিগত স্লোগানের প্রতি আনুগত্যকে দেশের স্বাধীনতার গ্যারান্টি বলে মনে করতেন।
ইসলামী উম্মাহর প্রথম অগ্রাধিকার হলো ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করা
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মহান প্রতিষ্ঠাতা ইসলামী সমাজের স্বাধীনতার নীতিকে ইসলামের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম মুসলমানদের ওপর কাফেরদের যেকোনো ধরণের আধিপত্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন; তাই তিনি ফিলিস্তিনি সমস্যাকে ইসলামী বিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, দখলদার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা মুসলিম জাতিগুলোকে উপনিবেশিক কায়দায় শোষণের লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের ফলাফল, এবং এর লক্ষ্য গোটা মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করা এবং মুসলমানদেরকে স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা ছাড়া আর কোনও কিছু নয়; আর তাই মুসলিম বিশ্বের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ফিলিস্তিনি সমস্যা সমাধান করা।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রনীতি যেকোনো ধরণের আধিপত্য ও পরাধীনতা প্রত্যাখ্যান করে
তবে, ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর যুক্তি অনুসারে আধিপত্য গ্রহণ না করার অর্থ বিদেশী সরকারের সাথে যেকোনো ধরণের সম্পর্ক প্রত্যাখ্যান করা নয়, এবং এটি স্বাধীনতা বজায় রেখে অন্যান্য দেশের সাথে বিনিময় এবং লেনদেনে বিশ্বাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিশ্বের সকল দেশের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়। অতএব, জাতীয় ক্ষেত্রে, এটি দেশের পররাষ্ট্র নীতি-বিষয়ক কর্মকর্তাদেরকে এ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদেরকে ঐক্য বজায় রাখার, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপশি সেইসব ইসলামী দেশ ও সরকারগুলির সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে যারা ইরানের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আর ইরান যেন পরাশক্তিগুলোর ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল না হয়। আর তাই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিগুলি যেকোনো ধরণের আধিপত্য ও পরাধীনতা প্রত্যাখ্যান, সত্যের দিকে আহ্বান, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই ও মজলুম বা সুবিধাবঞ্চিতদের সমর্থন দেয়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পশ্চিম ও প্রাচ্যের সাথে জোট প্রশ্নে নিরপেক্ষতা এবং মুসলমানদের ইসলামী পরিচয় পুনরুজ্জীবনের মত নীতিমালা-ভিত্তিক। #
পার্সটুডে/এামএইচ/০৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।