তিন ইউরোপীয় দেশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন আরাকচি
নিরাপত্তা পরিষদের বাতিল প্রস্তাব পুনর্বহাল করা অবৈধ: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি
পার্সটুডে-ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে তিন ইউরোপীয় দেশের (ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি) কর্মক্ষমতার সমালোচনা করেছেন।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন: নিরাপত্তা পরিষদের বাতিল হয়ে যাওয়া প্রস্তাব পুনর্বহালের জন্য এই তিনটি দেশের জেদ অযৌক্তিক, অবৈধ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।
পার্সটুডে অনুসারে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কপারের সাথে দেখা করেছেন। ওই বৈঠকে আরাকচি ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে তিন ইউরোপীয় দেশের কর্মক্ষমতার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং নিরাপত্তা পরিষদের বাতিল হয়ে যাওয়া প্রস্তাব পুনর্বহালের জন্য তাদের জেদকে অযৌক্তিক, অবৈধ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন: "গত ১০ বছরে ইউরোপীয় তিন দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের কোনও যুক্তি ছিল না। পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি এনপিটি অনুসারে ইরানের জাতিকে তার বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা অযৌক্তি। অপরদিকে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী সরকারের অবৈধ আক্রমণ এবং তার প্রতিক্রিয়ায় তিন ইউরোপীয় দেশের নীরবতা ও সন্তুষ্টির সুযোগে এই প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।"
আরাকচি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রকৃতি সম্পর্কে যে-কোনো সন্দেহ দূর করার জন্য কূটনীতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইরানের দায়িত্বশীল এবং নীতিগত পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে আরও বলেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তিন ইউরোপীয় দেশের ক্রমাগত প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের ঘটনা এবং পরবর্তীকালে ইরানের ওপর মার্কিন আক্রমণকে কূটনীতি এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করেন। তিনি সতর্ক করে দেন যে এই ধ্বংসাত্মক পদ্ধতির অপ্রত্যাশিত পরিণতি স্ন্যাপব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও সমর্থকদের বহন করতে হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতির পথ উন্মুক্ত রাখা এবং উত্তেজনা রোধে ইরানের অসংখ্য প্রস্তাব ও উদ্যোগের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন: "স্ন্যাপব্যাক নামের মেকানিজম সক্রিয় করার জন্য ওই তিন ইউরোপীয় দেশের সিদ্ধান্ত মূলত মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ চাপের অমানবিক নীতির ফল। এটি তিন ইউরোপীয় দেশের পক্ষ থেকে হুমকি এবং আইন ভঙ্গকারী পদক্ষেপ।"
ইরানি জনগণের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে আরাকচি উল্লেখ করেন যে, নিষেধাজ্ঞা, সামরিক আক্রমণ বা কূটনৈতিক চাপ কোনটিই ইরানের মতো একটি জাতিকে এই পথ থেকে সরাতে পারবে না যে জাতি তার স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধ বন্ধ করতে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে তার স্লোভেনীয় সমপক্ষ তানিয়া আনা ফিলোনের সাথে এক বৈঠকে গাজায় গণহত্যা এবং এই অঞ্চলে ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে স্লোভেনিয়ার নীতিগত অবস্থানের প্রশংসা করেন। তিনি ইসরাইলি অপরাধ বন্ধ করতে এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
ইরানের পরমাণু ইস্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধে তেহরানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেছেন আরাকচি। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদের বাতিল হওয়া প্রস্তাব পুনরুদ্ধারের জন্য তিন ইউরোপীয় দেশের পদক্ষেপকে একটি অযৌক্তিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ বলে বর্ণনা করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতমূলক ও বে-আইনি পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধরনের পদক্ষেপ কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুতর ব্যাঘাত ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বৈঠকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য রাষ্ট্রকে কূটনীতি এবং আইনের শাসন রক্ষা করার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো, ইরানের পারমাণবিক ইস্যুর ইতিহাস এবং গত দুই দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা অংশীদারদের নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতনভাবে ভেবে চিন্তে, নিরাপত্তা পরিষদের বাতিল হওয়া প্রস্তাব পুনর্বহাল রোধ করার ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়া কর্তৃক উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ইতিবাচক ভোট দেবে।#
পার্সটুডে/এনএম/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।