পশ্চিমা প্রচারণা ও গণমাধ্যম যুদ্ধের মোকাবেলা করা কঠিন, তবে সম্ভব: ইমাম খামেনেয়ী
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i154996-পশ্চিমা_প্রচারণা_ও_গণমাধ্যম_যুদ্ধের_মোকাবেলা_করা_কঠিন_তবে_সম্ভব_ইমাম_খামেনেয়ী
পার্সটুডে- ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, “জাতীয় প্রতিরোধ” বলতে প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্যমূলক চাপের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং দৃঢ়তা প্রদর্শনকে বোঝায়। তিনি আরও বলেন, কখনও এই চাপ সামরিক, কখনও অর্থনৈতিক, কখনও সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা মিডিয়া কেন্দ্রিক।
(last modified 2025-12-11T14:17:07+00:00 )
ডিসেম্বর ১১, ২০২৫ ১৮:৫৫ Asia/Dhaka
  • ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
    ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

পার্সটুডে- ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন, “জাতীয় প্রতিরোধ” বলতে প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্যমূলক চাপের বিরুদ্ধে ধৈর্য এবং দৃঢ়তা প্রদর্শনকে বোঝায়। তিনি আরও বলেন, কখনও এই চাপ সামরিক, কখনও অর্থনৈতিক, কখনও সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা মিডিয়া কেন্দ্রিক।

তার মতে, পশ্চিমা প্রচারণা ও গণমাধ্যম যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কঠিন, তবে তা অবশ্যই সম্ভব।
হজরত ফাতিমা জাহরা (সা. আ.)-এর শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আহলে বাইত (আ.)-এর জীবনাদর্শ বর্ণনাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সর্বোচ্চ নেতা এই মহিয়সী নারীর জন্মদিনে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

ধর্মীয় শোকগাথা বর্ণনাকারীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমাম খামেনেয়ী

 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পশ্চিমা মিডিয়া কর্মী এবং রাজনৈতিক-সামরিক কর্মকর্তাদের উসকানি ও প্রচারণাকে শত্রুর পক্ষ থেকে প্রোপাগান্ডা ভিত্তিক চাপ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন- বিভিন্ন ধরনের চাপের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন জাতি বিশেষ করে ইরানি জাতির ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। কখনও কখনও এই আধিপত্য হয় ভূখণ্ডগত, যেটা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় করছে।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, কখনও লক্ষ্যটা থাকে খনিজ সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, কখনও আবার জীবনধারায় পরিবর্তন আনা এবং আধিপত্যকামীদের বড় লক্ষ্য হলো পরিচিতিতে পরিবর্তন সাধন করা- এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।

ধর্মীয় শোকগাথা বর্ণনাকারীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমাম খামেনেয়ী

 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের আধিপত্যবাদীরা ইরানি জাতির ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসলামী বিপ্লব সেই সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতেও ইরানি জাতি নতি স্বীকার না করে ধৈর্য এবং দৃঢ়তার মাধ্যমে শত্রুদের ব্যাপক চাপ মোকাবেলা করে গেছে, শত্রুদেরকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, হজরত ফাতিমা জাহরা (সা. আ.)-এর গুণাবলী ও চরিত্রকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা মানুষের সীমিত বোধশক্তি দিয়ে সম্ভব নয়।  

তিনি আরও বলেছেন, আমাদেরকে হজরত ফাতিমা (সা. আ.) পথ অনুসরণ করতে হবে এবং তিনি ধর্মপরায়ণতা, ন্যায়কামিতা, সত্য প্রচার ও প্রকাশের সংগ্রাম, সংসার পরিচালনা, সন্তান লালন-পালনসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ করতে হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন- বাস্তবতা হলো প্রতিরোধের ধারণা এবং প্রতিরোধ সাহিত্য ইরান থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক দেশ এবং অন্যান্য কিছু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন- শত্রুরা ইরানের সঙ্গে যা করেছে তা যদি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে করত, তাহলে সেই দেশ এবং জাতি ধ্বংস হয়ে যেত।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, শোকগাথা শহীদদের স্মৃতি টিকিয়ে রাখার এবং দেশে প্রতিরোধের ধারণাকে গভীর ও বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সামরিক সংঘর্ষের উর্ধ্বে অর্থাৎ শত্রুর বিস্তৃত প্রচারণা ও মিডিয়া যুদ্ধের মধ্যে অবস্থান করছি, কারণ শত্রু বুঝেছে যে, এই ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভূমি সামরিক চাপের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করবে না।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের এই নেতা আরও বলেন, অবশ্যই কিছু মানুষ ধারাবাহিকভাবে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কার কথাও পুনরাবৃত্তি করছ, কেউ কেউ এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সন্দেহ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে চায়, কিন্তু ইনশাআল্লাহ তারা সফল হবে না।

ধর্মীয় শোকগাথা বর্ণনাকারীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমাম খামেনেয়ী

 

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরও বলেন, শত্রুর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো বিপ্লবের প্রভাব, উদ্দেশ্য, তাৎপর্য ও ধারণাগুলো বিলীন করা এবং ইমাম খোমেনী (রহ.)'র স্মৃতি মুছে ফেলা। তিনি আরও বলেন, শত্রুদের বিস্তৃত ও সক্রিয় জোটের কেন্দ্রে রয়েছে আমেরিকা, তার চারপাশে রয়েছে কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং তাদের আশেপাশে রয়েছে সেই দালাল, দেশদ্রোহী ও দেশহীন ব্যক্তিরা যারা ইউরোপে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।

সর্বোচ্চ নেতা শত্রুর উদ্দেশ্য ও সাজ-সজ্জা চেনা-বোঝাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, আমরা যেভাবে সামরিক যুদ্ধে আমরা নিজের অবস্থান ও সাজ-সজ্জা নির্ধারণ করি, তেমনি এই প্রচার ও মিডিয়ার যুদ্ধেও আমাদেরকে শত্রুর পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে এবং এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দিতে হবে যেগুলোকে শত্রুরা নিশানা করেছে, অর্থাৎ “ইসলামি, শিয়া ও বিপ্লবী জ্ঞান”।

ধর্মীয় শোকগাথা বর্ণনাকারীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইমাম খামেনেয়ী

 

তিনি বলেন, পশ্চিমাদের মিডিয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন হলেও তা অবশ্যই সম্ভব। এই পথে শোকগাথা বণনাকারীরা ধর্মীয় শোক সমাবেশগুলোকে বিপ্লবের মূল মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে পারে। আজকাল ধর্মীয় শোকগাথা প্রতিরোধ-সাহিত্যকে গড়ে তোলার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। কোনো চিন্তা বা ধারণা থাকার পরও যদি সেই ধারণা প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত সাহিত্য না থাকে, তবে সেই ধারণা বা চিন্তার মৃত্যু ঘটে। প্রতিরোধ সাহিত্যকে প্রচার করার অন্যতম ভিত্তি হলো ধর্মীয় শোকগাথা ও ধর্মীয় শোক-সমাবেশ আয়োজনের প্রথা।

ইসলামী বিপ্লবের নেতা ধর্মীয় শোকগাথা বর্ণনাকারীদেরকে কয়েকটি পরামর্শ দেন। এসবের মধ্যে রয়েছে- সকল পবিত্র ইমামদের জীবন ও আদর্শকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মীয় ও সংগ্রামী জ্ঞান ব্যাখ্যা করতে হবে। শত্রুর সন্দেহ উদ্রেককারী প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা বজায় রেখে শত্রুর দুর্বলতায় আক্রমণ করতে হবে। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি শত্রুকে মোকাবেলার জন্য কুরআন ভিত্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে।#

পার্সটুডে/এসএ/১৩