ইরান ও ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা; বহুপাক্ষিকতা জোরদারের কৌশল
-
ইথিওপিয়ার পার্লামেন্ট স্পিকারের সাথে পেজেশকিয়ানের সাক্ষাৎ
পার্সটুডে-ইথিওপিয়ার পার্লামেন্ট স্পিকারের সাথে বৈঠকে করেছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। বৈঠকে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন: ব্রিকস বিশ্ব পর্যায়ে ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
গতকাল (শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর) তেহরানে ইথিওপিয়ার স্পিকার তাগেসা চাফো'র সাথে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন: ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য ব্রিকস, যোগাযোগের একটি নতুন মডেল দিতে পারে।
ব্রিকস সংগঠনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এবং ইথিওপিয়ার যৌথ সদস্যপদের কথা উল্লেখ করে পেজেশকিয়ান এই বহুপাক্ষিক কাঠামোকে পারস্পরিক যোগাযোগ সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করা এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একতরফাবাদী পদ্ধতির মোকাবেলা করার জন্য একটি মূল্যবান এবং কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন: ব্রিকস জাতীয় সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং দেশের সভ্যতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে যোগাযোগের নতুন মডেল দিতে পারে এবং বিশ্ব পর্যায়ে ন্যায় ও ভারসাম্যপূর্ণ সহযোগিতার পথ সুগম করতে পারে।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইরানের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস গ্রুপটি একবিংশ শতাব্দীতে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনের প্রতীক। উদীয়মান নয়া অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে সহযোগিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের আধিপত্য হ্রাস করতে সহায়তা করে। ব্রিকসের অন্যতম লক্ষ্য হল স্বাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা এবং ডলারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা। এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলতে পারে।
ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) এবং কন্টিনজেন্সি রিজার্ভ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য একটি গুরুতর সংকল্পের ইঙ্গিত দেয়। ব্রিকস স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সহযোগিতার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে এবং পশ্চিমা আধিপত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ভিন্ন মডেল প্রদান করে।
ব্রিকস সদস্যদের সহযোগিতা কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বহুপাক্ষিক জোট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের একতরফা নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য, ব্রিকসের সদস্যপদ বহুপাক্ষিকতা, স্বাধীনতা এবং নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ওপর ভিত্তি করে তার বৈদেশিক নীতিকে শক্তিশালী করার একটি সুযোগ।
ব্রিকস একটি বহুমেরু এবং ন্যায়সঙ্গত শৃঙ্খলা তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে সমস্ত দেশ, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্থান রয়েছে। বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি হল পশ্চিমা শক্তিগুলোর নিষেধাজ্ঞার হাতিয়ার ব্যবহার। স্বাধীন আর্থিক ও বাণিজ্য ব্যবস্থা তৈরি করার মাধ্যমে ব্রিকস এই চাপগুলো কমাতে পারে।
ব্রিকস জাতীয় সার্বভৌমত্ব, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধার ওপর গুরুত্ব দেয় এবং পশ্চিমা আধিপত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ভিন্ন মডেল প্রদান করতে পারে। ব্রিকস-এ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহযোগিতায় ইরান নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা গঠনে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতি সর্বদা স্বাধীনতা এবং বৃহৎ শক্তির আধিপত্য মোকাবিলা করার ওপর জোর দিয়ে এসেছে। ব্রিকসের সদস্যপদ এই পদ্ধতিকে শক্তিশালী করে এবং ইরানকে উদীয়মান শক্তির পাশে রাখে। ব্রিকসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইরান তার সম্পর্ককে পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরতা থেকে দূরে সরিয়ে চীন, রাশিয়া, ভারত এবং ব্রাজিলের মতো উদীয়মান অর্থনীতির সাথে সহযোগিতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ইরানের জন্য, ব্রিকসে সদস্যপদ কেবল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ মোকাবেলার একটি হাতিয়ারই নয় বরং উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি বিশ্ব ব্যবস্থা পুনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করারও একটি সুযোগ।
ব্রিকস-এ স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করবে, বহুপাক্ষিকতা জোরদার করবে, পশ্চিমা বিশ্ব এবং ডলারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ করবে। এই জোট কেবল আঞ্চলিক উন্নয়নকেই প্রভাবিত করবে না বরং বিশ্ব ব্যবস্থাকেও বহুমেরুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।#
পার্সটুডে/এনএম/১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন