আর্থ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে জারিফের ইরাক সফরের গুরুত্ব
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ইরাকে অবস্থান করছেন। বাগদাদে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তিনি আলোচনায় মিলিত হবেন বলে কথা রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরাক সফর তিনটি কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দু'দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য সহযোগিতাকে শক্তিশালী করা বিশেষ করে জ্বালানি, পরিবহন এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা অগ্রাধিকার পাবে। দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে দু'দেশের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আঞ্চলিক উত্তেজনা নিরসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইরাক ও ইরানের সহযোগিতা জোরদার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, দু'দেশের মধ্যকার অভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে এই সফরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বা সম্পর্ককে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাগদাদে শিয়া ও সুন্নি মাজহাবের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরাকের প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট স্পিকার এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, ‘এ অঞ্চলে আমরা যারা আছি তারাই সব সময় থাকবো কিন্তু বিজাতীয়রা এক সময় চলে যাবে। কাজেই আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে’। তিনি বলেন, ‘ইরানের নীতি হচ্ছে বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পরিপূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করা এবং কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা’। এসময় ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তিনি বলেন বাগদাদ আঞ্চলিক পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে’।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে তেহরান ও বাগদাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় সহযোগিতা জরুরি। ইরানের পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাসিব নাইমি মনে করেন অর্থ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক এবং দু'দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থের আলোকে তেহরান-বাগদাদ সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায় না এ অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে উঠুক। মার্কিন সরকার ইরাক ও সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে এ দেশ দুটির জ্বালানি সম্পদ লুটপাট করছে। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে এ অঞ্চলে তারা সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে গোপনে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। আর এভাবে তারা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরাক সফর গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/২৭